আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর রেশমপল্লীগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে । বস্ত্র বুনন, সাজ-সজ্জা এবং কেনাবেচায় সরগরম এখানকার রেশম উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এবারও ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ঐহিত্যবাহী রাজশাহী সিল্কের বিভিন্ন ধরণের শাড়ি।
Advertisement
বরাবরের মত এবারও র-সিল্ক, বলাকা সিল্ক ও এন্ডি সিল্কের শাড়িতে পেইন্টিং, কারচুপি, কাটওয়াক, ফুলের নকশা ও জ্যামিতিক নকশায় নতুনত্ব এনেছে এখানকার সিল্ক শো-রুমগুলো। নতুনত্ব এসেছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও শার্ট এবং মেয়েদের থ্রি-পিসেও।
যান্ত্রিক তাঁতের খটখটানিতে মুখর রাজশাহীর সিল্ক কারখানাগুলো। শনিবার দুপুরে নগরীর বিসিক সিল্ক এলাকার সপুরার সিল্ক কারকানায় গিয়ে দেখা গেলো কর্মীদের ব্যস্ততা। ঈদ সামনে রেখে সেখানে চলছে বিভিন্ন ধরণের শাড়ি ও থান কাপড় বুনন। আরেক ইউনিটে হাতের ছোঁয়ায় সেইসব শাড়ি নান্দনিক করে তুলছেন কর্মীরা। সেখান থেকেই বাহারি শাড়িগুলো চলে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব শো-রুমে।
১৭ বছর ধরে সপুরা সিল্কের যান্ত্রিক তাঁত চালাচ্ছেন আনোয়ারা খাতুন। তিনি জানান, বছর আটেক থেকে তারা মসলিন সিল্কের আদলে সিল্কের থান ও শাড়ি তৈরি করে আসছেন। বাজারে মসলিন শাড়ির চাহিদা বেশি। ঈদ সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার প্রতিটি বিভাগের কর্মীরা। দিনভরই চলছে কাজ। পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন নারীরাও। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সুতা ও আমদানি করা সুতা থেকে কাপড় বুনছেন তারা।
Advertisement
এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসায় ভিড় বেড়েছে রাজশাহীর সিল্কপণ্যের শো-রুমগুলোয়। শনিবার রাজশাহীর অন্যতম সিল্ক বস্ত্র উৎপাদন ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের বিসিক এলাকার নিজস্ব শো-রুমে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। কেবল রাজশাহী নয়, সিল্কের টানে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে আসছেন ক্রেতারা।
নাটোর থেকে সিল্ক শাড়ি কিনতে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে এসেছেন সুমাইয়া মেহজাবিন। তিনি বলেন, হালকা হওয়ায় মসলিন শাড়ি পরতে আরামদায়ক। হাতের কাজের প্রতিটি শাড়িরই নিজস্বতা রয়েছে। নিজের, শাশুড়ি ও ননদের জন্য মসলিন শাড়ি কিনেছেন তিনি। এছাড়া মেয়ের জন্য থ্রি-পিস এবং স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন। প্রতি ঈদ উৎসবে রাজশাহী সিল্ক তার পছন্দের শীর্ষে।
সপুরা সিল্ক মিলসের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ক্রেতা আকর্ষণের শীর্ষে তাদের র-সিল্ক বা মসলিন সিল্ক । এবারও মসলিন সিল্কের ওপর অ্যামব্রয়ডারি ও হাতের কাজের শাড়ি এনেছেন তারা। নজর কাড়া নানান ডিজাইনের এসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকায়।
আর বলাকা সিল্কের ওপর হাতের কাজের শাড়িরও চাহিদা প্রচুর। রকমভেদে এ শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকায়। অ্যান্ডি সিল্কের ওপর নতুন ডিজাইনের হাতের কাজ এবং ব্লক-বুটিকের শাড়িও মিলছে সপুরার নিজস্ব শো-রুমগুলোয়। এর মধ্যে হাতের কাজের শাড়ি সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
এছাড়া সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে ব্লক-বুটিকের শাড়ি। এর বাইরে সফট সিল্কের স্ক্রিন প্রিন্ট ও ব্লক-বুটিক শাড়ি ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকায় এবং বিভিন্ন ধরণের বুটিক প্রিন্ট শাড়ি ৩ হাজার ৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন ডিজাইনের সিল্ক থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকায়। আর ম্যাচিং স্কার্ফ ও ওড়না বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। ছেলেদের ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৮ হাচার টাকায় পাঞ্জাবি ও শার্ট বিক্রি হচ্ছে।
পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের তেমন অসন্তোষ নেই বলে জানিয়েছেন সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী। তিনি বলেন, সিল্ক পোশাক মানেই ঐতিহ্য। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে উপহার হিসেবে পছন্দের শীর্ষে সিল্ক পণ্য। বাজারে সুতি ও সিল্ক বস্ত্র প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই।
আরএআর/আরআইপি