খেলাধুলা

বিশ্বকাপ জিততে চাই : হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ

বিশ্বকাপ শুরু হতে আর দুই সপ্তাহও বাকি নেই। ১৪ জুন থেকে রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ বিশ্বকাপের ২১তম আসর। সব ফুটবলাররাই ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছেন এ মহাযজ্ঞে লড়াই করতে। মেক্সিকান তারকা ফুটবলার হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজও (চিচারিতো) এর ব্যতিক্রম নন। তবে তার ভালো করার স্বপ্নটা বিস্তৃত বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা পর্যন্ত।

Advertisement

গ্রুপ ‘এফ’-এ জার্মানি, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে উত্তর আমেরিকার এ দেশটি। বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ভাবনা জানাতে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের স্মৃতি ও স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। চলুন দেখা যাক সেই সাক্ষাৎকারটি... সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছেন দারুল কারার তৌশিক।

প্রশ্ন : চলুন বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলা যাক। এটা আপনার তৃতীয় বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন আসলে?

চিচারিতো : এটা সবচেয়ে সেরা টুর্নামেন্ট, যেখানে আপনি দেশের হয়ে খেলতে পারেন এবং এটা দেশের জন্য সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হবার মঞ্চও। আমরা সবাই নিজের জায়গার জন্য লড়াই করি। তাই যখন ম্যানেজার আমাকে গত দু’বার ডাকলেন, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলাম। আমি আনন্দিত এবং আমার মাঝে নিজের দেশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার উদ্যমও কাজ করছিলো।

Advertisement

প্রশ্ন : এটা কি ক্লাব ফুটবলের ম্যাচগুলো থেকেও আলাদা?

চিচারিতো : আপনি জানেন, আমি ফুটবলকে কীভাবে দেখি। একজন ফুটবলারের তার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকম দায়িত্ব থাকে। যেমন আমি যখন ১৮ বছর বয়সী ছিলাম, তখন আমার প্রথম লক্ষ্যই ছিল কিভাবে নিজের অভিষেক ঘটানো যায়। সে জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।

আপনি যদি মেক্সিকো, জার্মানি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেনে খেলে থাকেন, অর্থাৎ যে লিগগুলোতে আমি খেলেছি, অবশ্যই ওই লিগগুলো আলাদা। কিন্তু যখন রেফারির কিক অফের বাঁশি বাজে, তখন লড়াইটা ১১ বনাম ১১। তখন যে জিনিসটা আপনার মাথায় থাকা উচিত, তা হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই দলকে তিন পয়েণ্ট পাইয়ে দিতে হবে। আমি যেভাবে ফুটবলকে দেখি ,সেভাবে অবশ্যই চাপ, দায়িত্বগুলো আলাদা।

প্রশ্ন : আপনার সবচেয়ে প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি কোনটি?

Advertisement

চিচারিতো : সবচেয়ে প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি হচ্ছে, ফ্রান্সের সাথে করা আমার গোলটি। সেটি এখনও ভুলতে পারি না।

প্রশ্ন : মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি তার আগে যখন আপনি শিশু ছিলেন।

চিচারিতো : আমি মনে করি, ২০০২ সালের কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের সময় আমি যথেষ্ট বড় ছিলাম। আমার মনে আছে, তখন খেলাগুলো দেখার জন্য ভোরে চারটা-পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতাম। এ কারণে ওই বিশ্বকাপটা আমার জন্য ছিল স্মরণীয়। কারণ তখন আমি ফুটবল দেখা, বোঝা ও নিজ দেশকে সমর্থন দেয়ার জন্য যথেষ্ট বড় ছিলাম। আমি বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখেছিলাম পরিবারের সাথে বসে।

প্রশ্ন : এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হচ্ছেন জার্মানির। যারা সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের একটি? এই ম্যাচ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

চিচারিতো : আমি অবশ্যই ম্যাচটির জন্য মুখিয়ে আছি এবং আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ২০১০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্পেনকে ১-০ গোলে হারিয়েছিলো সুইজারল্যান্ড। তারপরও স্পেন এগিয়ে যায় এবং চ্যাম্পিয়ন হয়। হ্যাঁ, ম্যাচটা অবশ্যই কঠিন হতে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা দল উভয়ই সমান। এটা আমাদের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ। তাই আমাদের ইতিবাচক হতে হবে এবং তিন পয়েন্টের জন্যই খেলতে হবে।

যে কোন টুর্নামেন্ট হোক কিংবা নির্দিষ্ট খেলা, সব খেলাতেই দুই পক্ষের জেতার সমান সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি দুই বছর আগে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন লেস্টার সিটি লিগ জিতেছিলো। তারপর ইউরোতে সব বাধা পেরিয়ে গ্রিস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। তারা পর্তুগালকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। তাই আপনি জানেন না, কখন কি ঘটতে যাচ্ছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে, বিশ্বকাপ জেতা। এটাই একমাত্র লক্ষ্য আমার, আমার সতীর্থদের এবং পুরো দেশের।

প্রশ্ন : আপনি গত বছর রাশিয়ায় জার্মানির বিপক্ষে খেলেছিলেন। সে ম্যাচটি কেমন ছিলো? সেখান থেকে আপনি কি শিখেছেন?

চিচারিতো : আমি মনে করি ওই ম্যাচটা খুব কঠিন ছিলো; কিন্তু এর পাশাপাশি ওটা ভালো একটা ম্যাচও ছিলো। তারা চার-পাঁচটা সুযোগ পেয়ে চারটি গোল দিয়েছিলো। যেখানে আমরা অনেকগুলো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারিনি। বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে গেলে এগুলো হবেই। আশা করি পরের ম্যাচে আমরা ভালো খেলতে পারবো এবং তারা একটি বাজে দিন কাটাবে। যেটা হবে আমাদের বিপক্ষে।

প্রশ্ন : ছোটবেলায় ফুটবল নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ছিলো?

চিচারিতো : আমি পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তারপর সময়ের সাথে সাথে এটি আরো বড় হতে থাকে। জাতীয় দলের হয়ে খেলা, বিশ্বকাপে খেলা এবং ইউরোপের ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকি; কিন্তু ছোটবেলায় নিজ দেশে একজন পেশাদার ফুটবলার হতে পারাটাই আমার স্বপ্ন ছিলো।

প্রশ্ন : যখন আপনি নিজেকে বিশ্বকাপে চিন্তা করেন, তখন আপনার মনে কি কোন স্মৃতি আসে নাকি আপনি যা করতে চান তা মনে আসে?

চিচারিতো : আমি একটি বিশ্বকাপ জিততে চাই। এটাই আমার মনে একমাত্র চিন্তা এখন। অবশ্যই আমার জাতীয় দলের হয়ে ভালো ভালো স্মৃতি রয়েছে; কিন্তু আমার আসল স্বপ্ন, আসল চিন্তা বিশ্বকাপ ট্রফিটাকে উঁচিয়ে ধরা।

ডিকেটি/আইএইচএস/আরআইপি