কমলাপুর রেল স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। মানুষের এ সারি এঁকে বেঁকে সিড়ি পেরিয়ে চলে গেছে বাহিরের দিকে। আগামী ১০ জুনের ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছে তারা।
Advertisement
পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়বেন রাজধানীবাসী। আর ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার (১জুন) থেকে। আজ দেয়া হচ্ছে ১০ জুনের টেনের টিকিট। এই টিকিট সংগ্রহে কাউন্টারের সামনে এসে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যে রাতে, কেউ কেউ যুক্ত হয়েছেন সেহেরি সময়। এখানে বসেই সেরে নিয়েছেন সেহেরি। আর সেহেরির পর থেকে এই লাইন আরও দীর্ঘ হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হতে থাকে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন।
কেউ পত্রিকা বিছিয়ে কাউন্টারের সামনে বসে, কেউবা গল্প-আড্ডার মধ্যে দিয়ে সময় কাটিয়েছে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ৮টায় টিকিট কাউন্টারগুলোতে ১০ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
অগ্রিম টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে কমলাপুর স্টেশনে অতিরিক্ত তিনটি কাউন্টার খোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৬টি কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ২টি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। অগ্রিম টিকিট বিক্রি নিশ্চিত ও সুশৃঙ্খল করতে তৎপর রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার কিছু পরে কমলাপুর স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থী জাহিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন বন্ধু। তারা কিনবেন আগামী ১০ জুনের চট্টগ্রামের টিকিট। সারা রাত টিকিটের জন্য অপেক্ষায় শেষে সেহরি সেরেছেন এখানে বসেই।
সেই অপেক্ষার ফলও পেয়েছেন তিনি। সকালে বিক্রি শুরুর পর পরেই কাঙ্খিত টিকিট হাতে পেয়েছেন তিনি। আলাপ হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, একদম সারা রাত এই টিকিটের জন্য এখানে অপেক্ষা করেছি। প্রায় ৮ ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে কাঙ্খিত টিকিটটি হাতে পেলাম। ঈদ করতে আগামী ১০ তারিখে বোন-দুলাভাই-ভাগনেসহ চট্টগ্রাম যাবো সে কারণে এত কষ্ট উপেক্ষা করে টিকিটের লাইনে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু টিকিট হাতে পেয়ে দীর্ঘ সময়ের কষ্ট ভুলে গেছি।
এদিকে নারী কাউন্টারের দাঁড়িয়ে ১০ তারিখের রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রুমা খাতুন। তিনি অবশ্য সেহেরির পরে এসে এই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টায়ও তার সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন ছিল। আলাপকালে তিনি বলেন, টিকিট সংগ্রহে নারীদের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকলেও টিকিট বিতরণে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিকে বলা হয়েছিল- প্রথমে সার্ভার ডাউন থাকে তাই একটু ধীরগতি। কিন্তু এখও সেই গতি বাড়েনি।
Advertisement
টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আব্দুল আজিজ বলেন, সকাল ৮টাকা থেকে বিরতিহীনভাবে আমরা টিকিট বিক্রি শুরু করেছি। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করলে আমরা তা ভালোভাবে বিতরণ করতে পারব।
টিকিট বিক্রির প্রথম দিনের সার্বিক বিষয় নিয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল থেকে সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এবার কাউন্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬ টি করা হয়েছ। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী কাজ করছে।
ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি চলবে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে টিকিট দেয়া হবে। আজ দেয়া হচ্ছে ১০ জুনের টিকিট। আগামী ২ জুন বিক্রি হবে ১১ জুনের অগ্রিম টিকিট ৩ জুন বিক্রি করা হবে ১২ জুনের টিকিট। এছাড়া ৪, ৫ ও ৬ জুন যথাক্রমে ১৩, ১৪ ও ১৫ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। ফিরতি টিকিট ছাড়া হবে ১০ জুন থেকে।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি হবে। একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
এএস/এমবিআর/পিআর