পঞ্চগড় থেকে বরিশালের দূরত্ব ৬১০ কিলোমিটার। মালবাহী একটি ট্রাককে এই ৬১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হলে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় ২২শ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই চাঁদার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
Advertisement
ট্রাক চালক রতনের ক্ষোভ, ‘পুলিশের অত্যাচারে রাস্তায় আর গাড়ি চালাতে মন টানে না। দিন যাচ্ছে চাঁদার পরিমাণ বাড়ছেই। ডাকাত নয়, সড়কে এখন পুলিশের ভয়। পুলিশ চাঁদাও নেয়। আবার সামান্য হেরফের হলে মামলাও দেয়।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ মোড়েই উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের অস্থায়ী স্ট্যান্ড। ওমুখো বাসও দাঁড়ায় এখানে। বাস না মিললে ট্রাক, মাইক্রোবাসও ভরসা হয় এখানকার যাত্রীদের কাছে। সেদিন দুপুরেও বাসের জন্য দীর্ঘ লাইন। যাত্রীদের ভিড় দেখে দশ চাকার ট্রাকটি থামিয়ে নেমে এলো চালক রতন। যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি শুরু করলেন। ভাড়া মেটাচ্ছেন রতনের হেলপারও। জনা দশেক যাত্রী উঠে গেল ট্রাকে। সঙ্গে কিছু মালামালও। ভাড়া বেশি দেয়ার কথা বলে ইঞ্জিন কাভারে বসার সুযোগ মিলল এই প্রতিবেদকের। যুবক বয়সী রতন ক্ষণে ক্ষণে পান গুঁজে দিচ্ছেন মুখে। ভরা গালে আলাপ তুলে সড়কের নানা খবরও দিলেন।
দশ বছর হয় ট্রাক চালাচ্ছেন তিনি। আয় থেকে তিন টনের একটি ট্রাক নিজেও কিনেছেন। সেটা ভাড়া দিয়ে আগের মালিকের ট্রাক চালাচ্ছেন এখনও। বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। পাথরের খ্যাপ মেরেই চালক হওয়া। পঞ্চগড়ের পাথরের পাশাপাশি ভারত, ভুটানের পাথরও বহন করেন। তবে এখন দূরপাল্লার যাত্রাতেই বেশির ভাগ সময় কাটান। আলাপের এক পর্যায়ে পুলিশের চাঁদার প্রসঙ্গ তোলেন।
Advertisement
বলেন ‘পুলিশের চাঁদার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। অন্যান্য চাঁদা তো আছেই। পঞ্চগড় থেকে বরিশালে গেলে এক টিপেই পুলিশকে দিতে হয় ২২শ টাকা। আসার সময়ও তাই এবং সেটা খালি ট্রাক হলেও। এইমাত্র রংপুর হাইওয়ে পুলিশকে দিয়ে আসলাম সাত শ টাকা। চাঁদা না দিলে ঠুনকো অজুহাতে মামলা দিয়ে দিত। পুলিশ তো এখন ডাকাতের চাইতেও ভয়ঙ্কর।’
চাঁদার কারণেই পণ্যের ভাড়া বাড়ে বলে দাবি চালক রতনের। বলেন, ‘আর এ কারণেই বাজারের এই অবস্থা। পুলিশকে চাঁদা দিতেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে বাধ্য হই। নইলে তো পেট চলে না। পুলিশ ঘুষ, চাঁদা নেয়া বন্ধ করলে দেশ এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। অন্তত দশ বছর ধরে ট্রাক চালিয়ে তাই বুঝতে পারলাম। দুই টাকাও চাঁদা দিয়েছি পুলিশকে। পুলিশের নির্লজ্জ আচরণে নিজেরও শরম লাগে।’
চাঁদার আলাপ না ফুরাতেই পাগলাপীরের গঞ্জিপুর পার হওয়ার পথে ফাঁকা রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশের একটি ভ্যান দাঁড়িয়ে। ট্রাক দেখে প্রায় সড়কের মধ্যখানে এগিয়ে এলো একজন মধ্যবয়সী পুলিশ সদস্য। চালকের কাছ থেকে দুই শ টাকা নিয়ে হেলপার বাম হাত বের করে দিল জানালা দিয়ে। বাজপাখির মতো ছোঁ দিয়ে সে টাকা হাতে নিয়ে পকেটে ভরলেন পুলিশ সদস্য।
ততক্ষণে ট্রাকের পেছনের চাকা স্পিডব্রেকার পার হয়েছে। গাড়ির গতি বাড়িয়ে পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিল চালক রতন। প্রতিবেদককে সাক্ষী মেনে বলেন, ‘দেখেন ফাঁকা জায়গায় স্পিডব্রেকার বসানো হয়েছে। কোনো চালক যেন এড়িয়ে যেতে না পারেন, তার জন্যই এই বাধা। চাঁদা আদায় করতেই মূলত এটি বসানো হয়েছে।’
Advertisement
এএসএস/ওআর/পিআর