দেশজুড়ে

মেঘনায় বিলীন হলো সাহেরার বেঁচে থাকার অবলম্বন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজারে দুটি দোকান ঘর ছিল ষাটোর্ধ্ব সাহেরা বেগমের। সহায়-সম্পদ বলতে এ দুটি দোকানই ছিল তার সম্বল। এ দোকান ঘরের ভাড়া দিয়েই চলতো স্বামী-সন্তান হারা এ বৃদ্ধার জীবন। তবে মেঘনা নদীতে গেল কয়েদিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তার দোকান ঘর দুটি। ফলে আয়ের আর কোনো উৎসই রইল না এই বৃদ্ধার।

Advertisement

বুধবার দুপুরে কথা হয় চকবাজারে স্থানীয় পুতুর গ্রামের বাসিন্দা সাহেরা বেগমের সঙ্গে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কীভাবে এখন জীবন চালাবেন এ সংশয়ে দিন কাটছে না তার।

সাহেরা বেগম জানান, তার স্বামী আবদুস ছাত্তার পাঁচ বছর আগে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে হাফেজ সানাউল্লা সংসারের হাল ধরেন। তিন-চার বছর আগে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে চকবাজারে দুটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন। পরে সেগুলো প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকায় একটি ওয়ার্কসপের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। এভাবে ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের জীবন। তবে গেল বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একমাত্র সন্তান সানাউল্লাও মারা যান। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন সাহেরা। সানাউল্লার স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদেরকে নিয়েই এখন সাহেরা বেগমের সংসার। দোকানের ভাড়ার টাকা দিয়ে কোনোরকম খেয়ে-না খেয়ে চলতো তাদের জীবন।

সাহেরা আরও জানান, গত শুক্রবার থেকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে অনেকের দোকানের সঙ্গে আমার ছেলের করে যাওয়া দোকান ঘর দুটিও বিলীন হয়ে গেছে। এ দোকানের ভাড়া দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। এখন কীভাবে সংসার চলবে। ছেলের বউ আর দুটি শিশু নিয়ে কার কাছে যাবো?

Advertisement

সাহেরা বেগমের মতো আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাতলপাড় ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের আবদুল মালেক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নদী ভাঙনে তারও একটি ওয়ার্কসপের দোকান বিলীন হয়ে গেছে। পাঁচ শতক জায়গায় ছিল দোকন ঘরটি। বাজারে প্রতি শতক জায়গার মূল্য ২০ লাখ টাকা। সে হিসেবে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মালেকের।

সাহেরা আর মালেকের মতো এমন আরো অনেকেরই দোকান ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চকবাজার সংলগ্ন এলাকার ঘর-বাড়িগুলোও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অব্যাহত নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে চাতলপাড়ের ঐতিহ্যবাহী চকবাজার বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অবৈধ ড্রেজিং ও নদীতে চর পড়ে গিয়ে গতিপথ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় তীব্র স্রোতের কারণে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।

এদিকে, নদী ভাঙনের খবর পেয়ে বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে চাকবাজার পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সার্ভে এবং ডিজাইন ডাটা প্রস্তুত করছি। যেহেতু মেঘনা নদীর কিশোরগঞ্জ অংশে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হয় সেজন্য কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করা হয়েছে। তাছাড়া নদীর চাতলপাড় অংশে জেগে ওঠা চর কেটে দিয়ে এ সমস্যা দূর করা যায় কী না তা নিয়েও পরিকল্পনা চলছে।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএ/পিআর