রাজনীতি

গতি নেই আন্দোলনে : থমকে আছে বিএনপির পুনর্গঠন

পূর্বঘোষণা থাকলেও বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। গত ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই আন্দোলনের পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্ত গত সাত মাসে আন্দোলন বা দল পুনর্গঠন কোনো কাজেই তেমন সফলতা পায়নি দলটি। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ঈদের পরপরই দল পুনর্গঠনের কাজ শুরুর পূর্বঘোষণা থাকলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতা জাগো নিউজকে বলেন, নেতাকর্মীদের নামে মামলা, গ্রেফতার, চার্জশিট ও গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।তারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশি বাধার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি আজ পর্যন্ত কোথাও উন্মুক্ত বা প্রকাশ্যে একটি বৈঠকও ডাকতে পারেনি। বৈঠকের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল প্রাঙ্গণ বা মাঠ যেখানেই ভাড়া নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হোক না কেন পুলিশ তাতে বাধা দিচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্থান ভাড়া পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের নামে ১৫ থেকে ২০টি করে মামলা থাকায় তারা জড়ো হতে পারছেন না।বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- দীর্ঘদিন ধরে দলটির অনেক নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ও গ্রেফতার এড়াতে পলাতক থাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলটির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ কমে গেছে। ফলে মূল দলের কর্মীদের সঙ্গে নেতার, আবার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে মূল দলের যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবেও এক ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। তাই সব কিছু সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরসহ অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নিভু নিভু অবস্থা। এসব সংগঠনের অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। তাই অগোছালো সংগঠন নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের কথা বললেও এর উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। দলের পুনর্গঠনে কোনো নেতাকে সেভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো বৈঠকও ডাকেননি খালেদা জিয়া। সম্প্রতি দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।চিকিৎসার জন্য দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে দুইজন কারাগারে, দুইজন হাসপাতালে ও তিনজন আত্মগোপনে রয়েছেন।এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরামর্শ মতো দলটির সাংগঠনিক বিষয়ে আরো যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনিও কারাগারে রয়েছেন। ফলে পরামর্শ শুনে কাজ করার মতো নেতা এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার পাশে খুব বেশি নেই। পাশাপাশি জাতীয় কাউন্সিল করার জন্যও রাজনৈতিক দক্ষতাসম্পন্ন নেতা প্রয়োজন, যা এ মুহূর্তে দলে নেই।বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ২০ হাজারেরও বেশি। এতে আসামি রয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেড় শতাধিক। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও ১৮টি মামলার খড়গ ঝুলছে। এছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও এ পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত মামলা করা হয়েছে। একইভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেও রয়েছে ৮৩টি মামলা। পাশাপাশি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে অর্ধশত করে মামলা রয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি। অন্যদিকে এক সময়ে রাজপথে সক্রিয় অনেক নেতাই বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ৩ নম্বর সদস্য ড. আর এ গনি,  ৬ নম্বর সদস্য এম শামসুল ইসলাম, ১০ নম্বর সদস্য এম কে আনোয়ার ও  ১১তম সদস্য বেগম সারোয়ারী রহমানসহ অনেক শীর্ষ নেতাই অসুস্থ থাকছেন। এসব নেতাদের অনুপস্থিতিও দলের আন্দোলন সফল না হওয়ায় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পুনর্গঠনের ব্যাপারে দলের ভেতর থেকে চাপ আছে, কিন্তু দল কারা গোছাবেন? সবাই তো হয় কারাগারে, নয় আত্মগোপনে। দল পুনর্গঠন করতে হলে কাউন্সিল করা প্রয়োজন। সেটা করতেও সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন নেতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে নেতাদের কারামুক্তিই দলের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শে কষ্ঠিপাথরের ন্যায় দলকে পুনর্গঠন করা হবে। চেয়ারপরসনসহ দলের নেতারা সেভাবে কাজ শুরু করেছেন। ত্যাগী, সাংগঠনিক, দক্ষ, মেধাবী ও আন্দোলন-সংগ্রামে সাধারণ কর্মীদের পাশে থাকে তাদের দিয়েই দল পুনর্গঠন করা হবে।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, দল পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা ও তাগিদ বিএনপির মধ্যে আছে। এ প্রক্রিয়ায় কিছু সময় লাগবে। কারণ দলের সিনিয়র নেতারাসহ বহু নেতাকর্মীরাই কারাগারে। তাই নেতাকর্মীদের মুক্তির পর দল গোছানোর কাজে হাত দেওয়া হবে। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনে কাজ করছেন। তবে কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া শেষ হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের তালিকা নানাভাবে খালেদা জিয়া সংগ্রহ করছেন জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, আন্দোলন যেকোনো মূল্যে সফল করার জন্য যোগ্যদের হাতেই নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এমএম/এসএইচএস/একে/এমআরআই

Advertisement