জাতীয়

শহর পানিতে ডুবলেও ঘরে খাবার পানি নেই

রাজধানী ঢাকায় একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় অধিকাংশ সড়ক, অলিগলি। কোথাও হাঁটু বা কোথাও তার চেয়েও বেশি পানি জমে যায়। অথচ এই পানির শহরেই বাসা-বাড়িতে খাবার পানি নেই। শহরের কোনো কোনো এলাকায় এ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় টানা প্রায় তিন ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের টানা কয়েকদিনের তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিতে প্রশান্তি এনে দিয়েছে রাজধানীবাসীকে। তবে অফিসগামী মানুষকে হতে হয়েছে নাকাল। সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে কর্মজীবী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়। বেশিরভাগ চাকরিজীবীই সময় মতো অফিসে যেতে পারেননি।

এদিকে শহর জুড়ে পানির টইটম্বুর থাকলেও বাসা বাড়িতে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, রমজানে রাজধানীর বিভিন্ন একালায় ওয়াসার লাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের মধ্যে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। রমজানে সন্ধ্যা ও সেহরির রান্নায় পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মের শুরু থেকে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

মহসিন নামের শিক্ষার্থী বলেন, ‘পানির শহরে পানি নাই, পানির দেশে পানি নাই, সেটা কোন দেশ? বাংলাদেশ, ঢাকা।’ মিরপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে আমাদের। রোজা রাখতে কষ্ট হচ্ছে। রাতে পানি আসেনি। বালতিতে একটু পানি ধরে রেখেছিলাম। তা দিয়েই সব কাজ করতে হয়েছে।

Advertisement

জানা গেছে, মতিঝিলের আরামবাগ এলাকায় গ্রীষ্মের শুরু থেকেই পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মনিপুরের কাঠালপাড়াবাসী একদিন পর পর রাতে পানি পাচ্ছেন। তাদের এই অবস্থাও দীর্ঘ দিনের। অনেক জায়গা লাগাতার পানি আসছে না। যদিও আসে দুর্গন্ধ ময়লাযুক্ত। মগবাজার, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, ধোলাইখাল, আগারগাঁও, খিলগাঁও, মান্ডা, পূর্ব জুরাইন ও পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারেও ও ওয়াসার লাইনে পানির সঙ্কট রয়েছে।

আরামবাগের বাসিন্দা হাজি মকবুল হোসেন জানান, পানির অভাবে নামাজ রোজা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের এখানে পানি নেই। অনেক কষ্টে দিন পার করছি।

পানি সঙ্কটে পড়েছেন রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বাসিন্দারাও। তাদেরকে রীতিমতো ছোটাছুটি করে লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যের বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ইয়াসমিন আক্তার নামে এক গৃহকর্মীর বলেন, লাইনে পানি নাই। এ জন্য অন্যের বাড়ি থেকে পানি টানতে হচ্ছে। এতে আমি প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছি।

একই অবস্থার কথা জানান রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা রহমান মুন্সি। তিনি বলেন, আমাদের পানির লাইনে সমস্যা আছে বলে মনে হয়। অনেক দিন ধরেই দুর্গন্ধ এবং হলুদ রঙের পানির পাচ্ছি। এখন তো নিয়মিত পানিই আসছে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

Advertisement

তবে রাজধানীতে কোথাও খাবার পানির সঙ্কট নেই বলে জানিয়েছে ওয়াসা। সিস্টেম লসের কারণে অনেক জায়গায় সাময়িক সমস্যা থাকলে তা খবর পাওয়া মাত্রই সমাধান করা হচ্ছে। এমনটাই দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।

তিনি বলেন, গ্রীষ্ম কালের জন্য ওয়াসার বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নেওয়া আছে। কোথাও পানি সমস্যা থাকলে সেখানে সরবরাহ করছি। ওয়াসার ৭৮০টি পাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পানি উত্তোলন করছি।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীর কোথাও পাম্প খারাপ হলে ওই এলাকায় একটু সমস্যা হয়। তবে এটা সাময়িক। খবর পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওয়াসার নিজস্ব গাড়িতে পানি পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের সামগ্রিক উৎপাদন প্রতিদিনের চাহিদার চেয়ে বেশি। এ জন্য পানির সঙ্কট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এমএ/আরএস/আরআইপি