আইন-আদালত

কারাগারেই ঈদ করতে হবে খালেদাকে

কুমিল্লার দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে ঈদের আগে তার মুক্তি মিলছে না।

Advertisement

এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল আবেদন (সিপি ফাইল) করতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ২৪ জুন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিনও ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে আপিলের আবেদন শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ড. মো. বশির উল্লাহ, এ কে এম দাউদুর রহমান মিনা, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মো. মাহমুদুল করিম রতন ও মো. শফিকুজ্জামান রানা।

Advertisement

অন্যদিকে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, আমিনুল হক, মীর মো. নাসির, সানাউল্লাহ মিয়া, কামরুল ইসলাম সজল, এহসানুর রহমান ও ফাইয়াজ জিবরানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঈদের পর সুপ্রিম কোর্টের ছুটি শেষে আগামী ২৪ জুন আদালত বসবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতর হবে ১৬ জুন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল আদালত খোলার পর প্রথম দিন ২৪ জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে বলা হয়েছে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের পর চার মাস ধরে বন্দী খালেদা জিয়া ওই মামলায় আপিল করে জামিন পাওয়ার পর ঈদের আগেই তার মুক্তির আশা করেছিলেন বিএনপি নেতারা।

আরও পড়ুন : কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদার জামিন ২৪ জুন পর্যন্ত স্থগিত

Advertisement

কিন্তু কুমিল্লার নাশকতার দু’টিসহ কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোয় তার মুক্তির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সেই পথ খুলতে মামলাগুলোতে হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন খালেদার আইনজীবীরা। গত ২৮ মে হাইকোর্ট কুমিল্লার মামলা দু’টিতে খালেদাকে জামিন দিলে ঈদের আগে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তিতে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গিয়ে পরদিনই হাইকোর্টের আদেশের উপর চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশ আনেন। চেম্বার বিচারপতি জামিনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দিয়ে তা পাঠান নিয়মিত বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন নিয়মিত আপিল বেঞ্চ চেম্বার বিচারপতির দেয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখায় খালেদার মুক্তির পথ আপাতত খুলছে না।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারই ‘ষড়যন্ত্র’ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এটা পুরোপুরি আদালতের বিষয় এবং তার উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদেশের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে। সরকার চায় বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, কারাগারে রেখে তারা নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করবে।’

তার বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। আদালত জামিন দিচ্ছে, আবার জামিন স্থগিতও করছে।’

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি প্রধান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারেও বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। তার এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে নড়াইলের চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম নামে এক ব্যক্তি এ সংক্রান্ত খবর পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর আমলি আদালতে মানহানির মামলা করেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতি মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় করাগারে। ওই মামলায় আপিলের পর খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। যেটি গত ১৭ মে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

অতীতে এমন দেখেনি

আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের পর তিনজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, অতীতে এমনটি আমরা দেখেনি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা চলতে পারে না।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট মেরিটে বেইল কনসিডার করলেও সুপ্রিমকোর্ট এটা ইন্টারটেইন করেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা চলতে পারে না। যেহেতু ওয়ারেন্ট হয়েছে, সেহেতু আমরা আবেদন করেছি। আদালত আমাদের বেইল দিয়েছে। আমরা সেই বেইলটা বহাল রাখার জন্য বলেছি।

খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, আর সরকার চাচ্ছে যেকোনো উপায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখতে হবে, কারাবন্দি রাখতে হবে। যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে সে মামলায় আমরা জামিন পেয়েছি। অথচ রাজনৈতিক মামলায় যেখানে খালেদা জিয়া বন্দী ছিল গুলশান অফিসে। তাকে সম্পৃক্ত করে আসামি করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই দেশের আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আছে, আমরা আদালতে বলেছিলাম অতীতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল ডিসক্রিমিনালি ওয়েতে খালেদা জিয়ার আপিলটি নিয়ে এসেছেন।

এফএইচ/এনএফ/আরআইপি