জাতীয়

সেজেছে তবে এখনও জমেনি ঈদ বাজার

ভেতরে ঢোকার পথেই দেখা মিলল মূল গেইটের বাহিরে সিঁড়িতে বসে আছেন কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা। প্রায় সবার সাথেই বিভিন্ন পণ্যের একাধিক বাহারি প্যাকেট-ব্যাগ। বুঝতে বাকি রইলো না, ঈদের কেনাকাটা শেষে শপিং মলের বাইরে সিঁড়িতে বসে গল্পের সঙ্গে তারা বিশ্রামও নিচ্ছেন।

Advertisement

মূল গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা-দর্শণার্থীদের ভিড়। রাজধানীবাসীর কাছে জনপ্রিয় শপিং মলগুলোর একটি এটি, পান্হপথের বসুন্ধরা সিটি। বছরের জুড়েই এখানে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতা-দর্শণার্থীদের ভিড় আরও বেড়েছে। শপিং মলটির সব দোকানও সেজেছে ঈদের সাজে।

এক ছাদের নিচে কেনাকাটার সুযোগ মেলায় ঈদের কেনাকাটায় জমজমাট এ শপিং মল। তবে ঈদের মূল কেনাকাটা এখনও জমে ওঠেনি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। শপিং মলটির ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের মূল কেনাকাটা এখনও জমে ওঠেনি। হয়তবা আরও ৪/৫ দিন লাগবে। জমে ওঠলে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হবে।

বুধবার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শণার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পছন্দের সব পণ্য দেখছেন। মানে ও দামে মিলে গেলে কিনছেন। ঈদ বাজারে ক্রেতাদের আগ্রহ আর হাল ফ্যাশন বিবেচনায় রেখে প্রতিটি দোকানও সেজেছে নতুন সাজে। নতুন নতুন সব কালেকশনে ক্রেতাদের কাছে টানছেন।

Advertisement

বসুন্ধরা সিটির বেজমেন্ট থেকে শুরু করে লেভেল সাত পর্যন্ত সারি সারি দোকানে সাজানো হয়েছে হরেক পণ্যে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, গয়না, চশমা, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, বাচ্চাদের খেলনা, শোপিস, গৃহস্থালির সামগ্রীসহ নতুন নতুন নানা রকম পোশাক। নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে শপিং মলটিতে।

শপিং মলটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ছোট-বড় সবার জন্য নানা ডিজাইনের বাহারি পাঞ্জাবি। সেখানে কথা হয় আইরো নামের একটি পাঞ্জাবি দোকানের সেলস অফিসার সাকিব আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রেতারা প্রতিদিন ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। ঈদ উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতিও শেষ। আমরা লেটেস্ট সব কালেকশন রেখেছি। তবে ঈদের মূল কেনাকাটা এখনও শুরু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে চাকরিজীবীদের বেতন হলেই জমে ওঠবে কেনাকাটা।

পাঞ্জাবির দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক রকমের পাঞ্জাবির কালেকশন আছে। এর মাঝে কটন ফ্রেব্রিক্স, কটন সিল্ক, তসর লিলেনের পাঞ্জাবিই বেশি চলছে। এগুলো ২ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।

বসুন্ধরা সিটির তৃতীয় তলায়ও রয়েছে বাহারি সব পোশাকের দোকান। প্রতিটি দোকানে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা ডিজেইনের মনকাড়া সব পোশাক। বাইরে ডিসপ্লে করা আছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোশাকগুলো। এমনি একটি অনামিকা ফ্যাশন হাউজ। ফ্যাশন হাউজটির ম্যানেজার সানি আহমেদ বলেন, এবার পুরো মার্কেটেই ড্রেসের নিত্য নতুন কালেকশন এসেছে। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফ্লোর টাস, গাউন, লং ফর্গসহ অন্য পোশাকগুলোও। এগুলো দাম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

Advertisement

তবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত কয়েকবার ধরে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ঈদের সময় আসলে অনেক ক্রেতারা ভারতে কেনাকাটা করতে যান, ফলে আমাদের নামিদামি ড্রেসগুলো বেশি বিক্রি হয় না।

তৃতীয় তলায় ইজি, দর্জিবাড়ি, ম্যানস ওয়ার্ড, জেন্টেল পার্ক, রিচম্যান, লুবনান, প্লাস পয়েন্টসহ সব দোকানগুলোতেই ক্রেতাদের ভিড়। ৪র্থ তলায় ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় শাড়ির দোকানগুলোতে। প্রেমজয়, চামেলী শাড়ি, নীল আচল শাড়ি, ঢাকা জামদানি কুটির, শাড়ি সেন্টার, জামদানি হাউস, ছোঁয়া, জ্যেতি শাড়ি ঘরগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়।

শপিং মলটির পঞ্চম তলায় জুয়েলারি, অর্নামেন্স, চশমার দোকানগুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি কম। তবে ৬ষ্ঠ-৭ম তলায় জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়। ৭ম তলায় ইনফিনেটি, দেশি দশ-ইস্টাসির সহ অন্যান্য শো-রুমগুলোতে নিত্য নতুন বাহারি সব কালেকশন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। ক্রেতারাও ঘুরে ঘুরে নানা পণ্য দেখছেন এবং পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন।

সেখানেই ছোট ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট আর প্যান্ট কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাহিনা খাতুন। তিনি বলেন, যেহেতু ঈদের কেনাকাটা করতেই হবে তাই একটু তাড়াতাড়িই সেড়ে ফেললাম। ঈদের বাজার জমে ওঠলে ভিড়ের কারণে কানাকাটা করা ঝামেলা হয়ে যায়।

পাশেই আরেক ক্রেতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অহনা আক্তার বলেন, এক ছাদের নিচে পরিপূর্ণ কেনাকাটার সুযোগ মিলে এখানে, যে কারণে প্রতিবার ঈদের কেনাকাটা এখান থেকেই করি। আজ ঘুরে ঘুরে নতুন কালেকশনগুলো দেখছি, অল্প কিছু কিনেছিও। তবে মূল কেনাকাটা শুরু করব ৫/৬ দিন পর।

শপিং শলটির ৮ম তলায় সিনে কমেপ্লেক্সে তেমন একটা ভিড় না থাকলেও ইফতারের সময় পা ফেলানো জায়গা থাকে না। দেশি বিদেশি সব খাবারের স্বাদ পেতে ইফতারে ভিড় করেন বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসে ক্রেতা-দর্শণার্থীরা। সেখানকার দোকানীরা জানান, ইফতারের সময় দেশি-বিদেশি নানা খাবারের আয়োজন থাকে। এছাড়া ইফতার উপলক্ষে রয়েছে নানা প্যাকেজ।

এএস/আরএস/আরআইপি