গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ ও পাশ্ববর্তী ফেনী থেকে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লাখ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় এবং রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় উপজেলাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি,পয়নিষ্কাশন ও বিভিন্ন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থা আর কয়েকদিন চললে লাখ লাখ লোকের চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। সরেজমিনে জেলার বেগমগঞ্জ, সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি টানা বর্ষণে প্রতিটি গ্রামের হাজার হাজার মৎস্য খামার ভেসে গেছে। পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামের বাড়ি-ঘর এখন হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে সেচ চেষ্টা করে রান্না করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক শিশুদের নিয়ে । প্রায় প্রতিটি বসত ঘরের কাছে পানি চলে আসার সাপসহ বিভিন্ন বিষাক্ত জীবের ভয়ে অভিভাবকরা দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলোও ডুবে গেছে। অনেকে ইতোমধ্যে চলাচলের জন্য বাঁশের সাকো তৈরি করে কোনরকম চলাফেরা করছেন। এমতবস্থায় রোববার থেকে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এদিকে নোয়াখালী জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করণীয় নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জেলা প্রশাসকের রুমে এক জরুরি সভা আহ্বান করেন জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস। চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল জানান, কয়েকদিন থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদান করছেন। যেসব রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে সেগুলো সরেজমিন দেখতে এলাকায় ঘুরছেন। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার ধনীজনদের থেকে সহায়তা নিয়ে গরীবদের মাঝে বিতরণ করছেন। তিনি বলেন, এ বন্যায় পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকালাগুলোতে শনিবার দিনভর ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগদ টাকা, শুকনো চিড়া বিতরণ করা হয়েছে। চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল ও ২ নং ওয়ার্ড কমিশনার বাহার উদ্দিন বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় আক্রান্ত দরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নুর হোসেন সেলিম ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সিঙ্গাপুর প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম জনির রহমান ফাউন্ডশেনর উদ্যোগে ৫শ’ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার মুড়ি ও চিড়া বিতরণ করেছেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাহিদা হাবিবা জানান, সারাদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ২৩টি বেসাল জাল আটক করেছেন। ছোট বড় অনেক গুলে বাঁধ কেটে দ্রুত পানি নামানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শতাধিক ঘর নষ্ট হওয়ার সংবাদ জেনেছেন। পূর্বে পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। আরো কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতির তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল বিধায় আরো বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয়া হবে বলে জানান তিনি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাহারুল ইসলাম আবু হেনা জানান, জেলার ৭৯টি ইউনিয়নে ১০ টন গম ও নগদ ২০ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।মিজানুর রহমান/এসএইচএস/এমআরআই
Advertisement