দেশজুড়ে

সনদ নেই, তবুও তারা দাঁতের চিকিৎসক

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় প্রায় দুই ডজন চিকিৎসক সনদপত্রবিহীন দাঁতের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের একজনেরও শিক্ষাগত কোনো সনদ নেই। তবুও তারা দাঁতের চিকিৎসক।

Advertisement

সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ না নিয়েই নিজের ইচ্ছে মতো নামের আগে চিকিৎসক আর পরে বড় বড় ডিগ্রি ব্যবহার করে দাঁতের চিকিৎসালয় খুলে বসেছেন তারা।

দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক পেশার মতো একটি সুরক্ষিত পেশায় জড়িয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন তারা। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকবার প্রতারণাকারী ডেন্টাল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। ওই অভিযানে সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন ডেন্টাল প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ওই সময় অভিযান আতঙ্কে ডেন্টাল ক্লিনিকের মালিকরা তাদের চেম্বার বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। নামের আগে ডা. লেখা মুছে দিয়েছিল অনেকে। কিন্তু দিন ঘুরতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আগের মতো বর্তমানে দাঁতের চিকিৎসা চেম্বার খুলে বসে তারা।

Advertisement

এর মধ্যে বিনাসনদে চলছে সদরপুর উপজেলার সদর বাজারে হালিমা ডেন্টাল কেয়ার, আদর্শ ডেন্টাল ক্লিনিক, ফাতেমা ডেন্টাল কেয়ার, সততা ডেন্টাল কেয়ার, মদিনা ডেন্টাল কেয়ার, সদরপুর ডেন্টাল কেয়ার, খান ডেন্টাল কেয়ার ও খান ডেন্টাল কেয়ারের চিকিৎসা।

এছাড়া সদরের বাইরের এলাকা কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মজুমদার বাজারের জাকের ডেন্টাল কেয়ার, সদরপুর ইউনিয়নের সাড়ে সাতরশি বাজারে নাজমুল মেডিকেল হলসহ প্রায় দুই ডজন দাঁতের চিকিৎসক খুলেছেন ডেন্টাল প্রতিষ্ঠান।

সততা ডেন্টাল কেয়ারের মালিক মো. ইমরান মাহমুদ বাবুল বলেন, আমি ছয় মাসের একটি ডিডিটি কোর্স করেছি। আমরা বিভিন্ন লোকজনকে ম্যানেজ করে কোনো রকমে চলি। করার কিছুই নেই ভাই।

ফাতেমা ডেন্টাল কেয়ারের মালিক সোহেলা আফরিন স্বপ্না বলেন, চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন ডেন্টাল কোর্স করতেছি। কোর্স শেষ হতে আর এক বছর বাকি। তাই ডেন্টাল ক্লিনিক খুলেছি।

Advertisement

মদিনা ডেন্টাল কেয়ারের মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদরপুরে কোনো ডাক্তারের লাইসেন্স বা ডিগ্রি নেই। আমি উনাদের মতো করে আমার ডিগ্রি লিখেছি। আমার কোনো প্রতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই। তাই নামের আগে ডিডিটি, আরএসপি যোগ করে নিয়েছি।

হালিমা ডেন্টাল কেয়ারের মালিক হালিমা খাতুন বলেন, চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন ডেন্টাল কোর্স করতেছি। আমার প্রতিষ্ঠানিক সনদপত্র রয়েছে। অনেকে কোনো সনদ না নিয়েই যত্রতত্র ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন।

শৌলডুবী মজুমদার বাজারের জাকের ডেন্টাল কেয়ারের মালিক মো. শাহেদ আলী বলেন, আমার কোনো সনদ নেই। তবে আমি দাঁতের ভালো চিকিৎসা করি।

একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, দালাল ও নিজস্ব সোর্স খাটিয়ে অল্পশিক্ষিত ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে তাদের ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র। অনেক সময় ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম লিখা নিয়েও ভুলক্রুটি দেখা যায়। নামহীন কোম্পানির অতিরিক্ত কমিশন বাণিজ্যের জন্য রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ওসব ওষুধ লিখেন প্রতারণাকারী ডেন্টাল ক্লিনিকের নামধারী চিকিৎসকরা। মাঝে মধ্যে চিকিৎসা করাতে এসে অপচিকিৎসার বেড়াজালে আটকে যায় অনেকে। প্রতিদিন এসব ক্লিনিকে সিরিয়াল দিয়ে দাঁতের রোগী দেখছেন তারা। ডাক্তারি কোনো ডিগ্রি না থাকলেও ৫০০ টাকা ফি নিচ্ছেন এসব দাঁতের চিকিৎসক।

সরেজমিনে ক্লিনিকগুলোতে দেখা যায়, দাঁতের ফিলিং, স্কেলিং, লাইট কিউর, ফিলিং ক্যাপ, দাঁত ওঠানো, দাঁত বাঁধানোর সব কাজ কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পদ্ধতির জন্যে রোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে এসব ডাক্তারের কেউই তাদের ডাক্তারি সনদপত্র দেখাতে পারেননি।

সদরপুরের শৈলডুবি গ্রামের বাসিন্দা আসলাম শেখ জানান, জাকের ডেন্টাল থেকে দাঁতের স্কেলিং করিয়েছিলাম। স্কেলিংয়ের পর থেকেই মুখে ইনফেকশন করে তা সারাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমার মতো অনেকেই এসব ভুয়া চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান কবির চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানান। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিক উল্লাহ বলেন, এসব চিকিৎসকের কারো কোনো সনদ নেই। এদের তালিকা করে ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, সনদপত্রবিহীন কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এর আগেও একাধিক ভুয়া চিকিৎসককে সাজা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের দেখার কথা। তারা কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। তবে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।

এএম/জেআইএম