দেশজুড়ে

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে জ্যোতি

ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে আজ দুঃসহ জীবন যাপন করছে সাড়ে তিন বছরের শিশু জ্যোতি। তার জীবনের শুরুতেই নেমে আসে অন্ধকার। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এসি পাল। শিশু জ্যোতির উপর নয় দিন বয়স থেকে শুরু করে সাড়ে তিন বছর বয়স পর্যন্ত তিন তিন বার অপারেশন করে মেয়েটিকে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি বলে অভিযোগ করেছে জ্যোতির পরিবার। এখন এই দায়ভার এড়াতে মেয়েটিকে ঢাকার হাসপাতালে স্থানান্তর করে দায়ভার এড়িয়ে যাচ্ছেন ডা. এসি পাল।

Advertisement

অপরদিকে ডা.এসি পালের ভুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন জ্যোতির দরিদ্র বাবা জাহিদ মিয়া। অর্থাভাবে তিনি এখন মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগার করতে হিমশিম খাচ্ছেন। উপায়ন্ত না পেয়ে মঙ্গলবার তিনি জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার কাছে তার মেয়ের এ ভুল চিকিৎসার কথা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক তার মেয়ের সঠিক চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দেন।

জানা যায়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কাউলিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ মিয়ার মেয়ে জ্যোতি। জন্মের সাত দিনের মাথায় তার পেটে সমস্যার কারণে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.এ সি পালের কাছে নিয়ে যান। ডা. এসি পাল তখন শিশুটিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অপারেশন করার কথা বলেন। দুই দিন পর নয় দিন বয়সে শিশু জ্যোতিকে অপারেশন করেন ডা.এসি পাল। এরপর কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর পুনরায় সমস্যা আরও বেড়ে যায় জ্যোতির। তখন আবার ডা.এ সি পালের কাছে আসলে তিনি বলেন আবারও অপারেশন করতে হবে। জ্যোতির দুই বছর বয়সে পুনরায় দ্বিতীয় বার অপারেশন করেন এসি পাল। এরপর বাড়িতে নেয়া হয় জ্যোতিকে। অপারেশনের পর জ্যোতির কোনো শারীরিক উন্নতি না হয়ে বরং আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুনরায় এসি পালের কাছে আনা হলে তিনি আবারও অপারেশন করার কথা বলেন। মাস দুয়েক আগে তৃতীয় বারের মত জ্যোতিকে অপারেশন করা হয়। এরপরও জ্যোতি সুস্থ না হওয়ায় ডা. এসি পাল ঢাকার শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন জ্যোতিকে। সেখানকার চিকিৎসক ডা.আমিনুর রশিদ ও ডা.আজিজ জ্যোতিকে দেখে বলেন ফরিদপুরে যে তিন বার অপারেশন করা হয়েছে সেটা সঠিক হয়নি। পুনরায় আবার অপারেশন করতে হবে জ্যোতিকে। এ কথা শুনে দরিদ্র পিতা জাহিদ মিয়া জ্যোতিকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন।

শিশু জ্যোতির বাবা জাহিদ মিয়া বলেন, জ্যোতির বয়স যখন সাত দিন তখন ওর প্রসাব, পায়খানা ঠিকমত না হওয়ায় ডা. এসি পালের শরণাপন্ন হই। তার পরামর্শ মতে প্রায় সাড়ে তিন বছর তার কাছে মেয়ের চিকিৎসা করাই। এর মধ্যে তিনি তিনবার জ্যোতিকে অপারেশন করেন। অপারেশনের পর কোনো উপকারতো হয়ইনি, উল্টো মেয়েটি আজ দুঃসহ অবস্থায় জীবনযাপন করছে। মেয়েটির ক্ষতি করে সর্বশেষ তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিল এ সি পাল। সেখানেও সঠিক চিকিৎসা পেলাম না। একদিকে মেয়েটির কষ্ট, অপরদিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে আজ আমি নিঃস্ব।

Advertisement

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এসি পাল বলেন, কোনো ডাক্তারই চায় না চিকিৎসা দেয়ার পর কোনো রোগী অসুস্থ থাকুক। ডাক্তারের চিকিৎসার ভুল হয় না। জ্যোতির ক্ষেত্রেও ভুল অপারেশন বা চিকিৎসা করা হয়নি। সঠিক অপারেশন করেই চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জ্যোতি যে রোগে আক্রান্ত তাকে হাসপ্রাণ ডিজিজ বলে। রোগটি অনেক জটিল। সময় লাগবে ভালো হতে। অপারেশনের সময় জ্যোতির পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েই অপারেশন করা হয়েছিল। ডা. এ সি পাল বলেন, নয় দিন বয়সী একটি শিশুকে অপারেশনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তুললাম আর এখন বলছে আমি ভুল চিকিৎসা করেছি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, শিশু জ্যোতি ও তার বাবা জাহিদ মিয়া আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য। তিনি বলেন, শিশু জ্যোতির উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিচ্ছি। যেখানে এ রোগের ভাল চিকিৎসা হয় সেখানেই তাকে পাঠানো হবে। দরিদ্র অসহায়দের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় রয়েছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান কবির চৌধুরী বলেন, আমি ছুটিতে থাকায় শিশু জ্যোতির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।

আরএ/পিআর

Advertisement