দেশজুড়ে

ছিটমহল জুড়ে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা

আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটলো। ছিটমহল জুড়ে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। আর নয় ছিটবাসী আমরা এখন বাংলাদেশি এ শ্লোগানে মুখরিত হচ্ছে গোটা ছিটমহল। ফুলবাড়ীর দাসিয়ারছড়া ছিটের আমিনুল, রত্না, কামাল জানায়, আমরা ৭১ দেখিনি। স্বাধীনতা কি জানি না। এখন আমরা প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে বলতে পারছি আমরা স্বাধীন। আমরা মুক্ত। আমরা এখন বাংলাদেশের নাগরিক।চোখে মুখের আনন্দের স্ফুরণ ঘটছে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে। অবরুদ্ধ জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের মানুষ পরিচয় পেল বাংলাদেশি হিসেবে। এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া অধিবাসীদের বাধঁভাঙ্গা উল্লাস ও আনন্দ উৎসব।ইতিহাসের খাতায় নাম লেখালেন ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও আরশাদ আহসান হাবিব। জাতীয় সঙ্গীত এর মধ্য দিয়ে শনিবার সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দিনের প্রথম প্রহরে দাসিয়ারছড়া কালিরহাট বাজার সংলগ্ন মসজিদ এর পাশে এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বড় গাওচুলকা ছিটমহলেও রাষ্ট্রের পক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।ছিটমহলের অধিবাসীরা আজ স্বাধীন। তাদের আর মিথ্যা পরিচয় বহন করতে না। অন্যদিকে কালিরহাট বাজার সংলগ্ন সমন্বয়টারীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দাসিয়ারছড়ার অবরুদ্ধ মানুষের সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতঞ্জতা ও অভিনন্দন জানিয়ে জনসভা আয়োজন করা হয়। সদ্য অবলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়ার সভাপতি আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মন্জু মন্ডল, চাষী এমএ করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতাউর রহমান শেখ, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, সাঈদ হাসান লোবান, অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু, আনিছুর রহমান টিপু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার ওয়াহেদুন্নবী সাগর, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শাকিব প্রমুখ।অপরদিকে বিকেলে দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে ছিটমহল আন্দোলনের প্রাণপুরুষ স্বর্গীয় দীপক সেনগুপ্তের নামে একটি সড়কের নামকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদ্য বিলুপ্ত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারতীয় অংশের সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। ভিত্তিপ্রস্তুরের মাধ্যমে ফুলবাড়ীর গঙ্গারহাট বাজার হয়ে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের অভ্যন্তর দিয়ে খড়িবাড়ি বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ করা হয় প্রথম ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনকারী ব্যক্তিটির নামে।   দাসিয়ারছড়ার আলী আহাম্মদ খন্দকার, আব্দুল জলিল, মোফাজ্জল ও মফিজুল জানান, আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা এখন আমাদের পরিচয় দিতে পারব। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এজন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তবে এর জন্য  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের সু-স্বাস্থ্য কামনা করি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মইনুল হক জানান, আমরা ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান পেলাম। তবে আমরা সরকারের কাছে আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের মধ্য দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে।নাজমুল হোসেন/এসএস/এমআরআই

Advertisement