ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদের এ আনন্দ নতুন জামা কাপড় ছাড়া কি চলে? তাই উৎসবের এ আনন্দকে প্রাণবন্ত করতে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের মতো বসুন্ধরা শপিং সেন্টারও সেজেছে নতুন সাজে। দেশীয় ঐতিহ্য-আধুনিকতা আর সংস্কৃতিকে লালন করে পসরা বসিয়েছে ‘দেশী দশ’। একই ছাদের নিচে দেশীয় দশটি ফ্যাশন হাউসের সম্মিলিত ব্র্যান্ড 'দেশী দশ’।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সাদাকালো, নগরদোলা, বাংলার মেলা, কে-ক্র্যাফট, নিপুণ, বিবিআনা, অঞ্জনস, দেশাল, রঙ এবং সৃষ্টি। ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনে সব বয়সী মানুষের জন্য আরামদায়ক পোশাক এনেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ঐতিহ্য ও নিজস্ব স্বকীয়তায় তৈরি এসব নতুন পোশাক নজর কাড়ছে ক্রেতাদের।
বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৭ এ ‘দেশী দশ’ ঘুরে দেখা গেছে, এক সঙ্গে দশটি ফ্যাশন হাউস রঙবেরঙের কাপড় সাজিয়ে রেখেছে। প্রত্যেকটির হাউসের আছে নিজস্ব সংগ্রহ এবং আয়োজনের ভিন্নতা। সবাই নিজেদের নতুন নতুন কালেকশন (পোশাক) ক্রেতাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া নজর কাড়ে। এখানে রয়েছে আধুনিকতার সমন্বয়।
ক্রেতারা একটি থেকে বের হয়ে আরেকটিতে যাচ্ছেন। নেড়ে চেড়ে দেখছেন কাপড় আর বিভিন্ন নকশা। পছন্দ আর বাজেট মিলে গেলেই কিনে নিচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, দেশী ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এসব প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতিতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের জন্য মান সম্মত পণ্য ‘দেশী দশে’ রয়েছে। সেই সঙ্গে দামও রাখা হয়েছে হাতের নাগালে।
Advertisement
নিজস্ব সব ডিজাইনে দেশীয় তাঁত শিল্পীদের নিপুণ হাতে ছোঁয়া রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের পোশাকে। ফলে পোশাকগুলো ক্রেতাদের নজর কাড়ে। তাছাড়া পরিবারের বাবা-ছেলে, মা-মেয়েদের জন্য মেচিং করা প্যাকেজও পাওয়া যায় এসব প্রতিষ্ঠানে।
তারা আরও জানান, নারীদের জন্য দেশি সিঙ্গেল সেলোয়ার কামিজ, থ্রি-পিস, শাড়ি এবং পুরুষের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্টসহ শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সের মানুষের পোশাক স্থান করে নিয়েছে দেশী দশের শো-রুমগুলোতে।
দেশীয় পোশাকে ঈদ আনন্দের রঙে রাঙানোর জন্য ক্রেতারা দেশী দশে আসছেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আসলে এক সঙ্গে একই স্থানে দশটি ভিন্ন ভিন্ন শো-রুম আছে, সেই সঙ্গে হরেক রকম ডিজাইনও এসব প্রতিষ্ঠানে এক সঙ্গে দেখা যায়। এতে কেনাকাটায় সময় কম লাগছে। অন্যদিকে যাচাই-বাছাইও করা যাচ্ছে সহজে। আর সবচেয়ে বড় কথা এখানে পোশাকগুলো দেশীয় ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে লালন তৈরি করা হয়। এজন্য এখানে আসছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
দেশী দশের কালেশন, দাম ও ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সাদা কালো
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সমন্বয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের কাজ করা পোশাক এনেছে সাদাকালো ফ্যাশন হাউস। ঈদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। নারীদের জন্য থ্রি পিস ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
বাচ্চাদের ফ্রক, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০-১৮০০ টাকায়। মুসলিন, হাফ কটন সিল্ক শাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী এইচ পি ইমরান খান জানান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনেক রঙ থাকলেও আমাদের মাত্র দুটি কালার। এ বিষয়টি চিন্তা করেই আমরা ডিজাইন ও দাম নির্ধারণ করেছি। ঈদে বেশিরভাগ পোশাকই নতুন ডিজাইন করা। যে কোনো ক্রেতার নজর কাটবে।
নগরদোলা
বিভিন্ন ধরনের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকায়। পাঞ্জাবি ৮৯০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা, মেয়েদের থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৭৯০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায়। বাচ্চাদের পোশাক ৪৫০-১৭০০ টাকা।
বাংলার মেলা
পাঞ্জাবি ১১৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, থ্রি-পিস ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, শাড়ী ৬০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি সার্ট ও ফোতুয়া বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকায়।
কে-ক্রাফট
নতুন নতুন নকশা করা শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। পাঞ্জাবি ৯৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়, মেয়েদের থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকা থেকে ৬৫০০ টাকা। সব বয়সের বাচ্চাদের পোশাক ৪৫০-৩৫০০ টাকা।
নিপুণ
নিপুণে পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৯৯০ থেকে ৪ হাজার টাকা, শার্ট ১ হাজার টাকা, থ্রি পিস ১ হাজার ৭৯৫ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা, বাচ্চাদের পোশাক ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ১১শ’ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিবিআনা
ঈদে পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-২৭০০ টাকায়। মেয়েদের থ্রি-পিস ২২০০ থেকে ৫ হাজার। ওয়ান পিস ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বাচ্চাদের ফ্রক, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০-৮০০ টাকায়। শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অঞ্জনস
শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। পাঞ্জাবি ৮০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায়, মেয়েদের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-৭০০০ টাকা। বাচ্চাদের পোশাক ২৫০-৪০০০ টাকা। এছাড়া পুরুষের হাফ শার্ট ৫৫০-৮০০ টাকা, ফতুয়া ৪৫০-১২০০ টাকা।
দেশাল
শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা থেকে ১৭ হাজার টাকা। পাঞ্জাবি ৮০০-১২০০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-৪০০০ টাকা, কামিজ ৯৫০-২২০০ টাকা। বাচ্চাদের ফতুয়া, শার্ট ১৯০-৫০০ টাকা এবং ফ্রক, থ্রি-পিস ২৫০-৯৫০ টাকা।
রঙ
কটন, মসলিন ও সিল্কের উপর হাতের কাজ করা কাপড়ের কালেকশন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রতিষ্ঠানটির আউটলেট ইনচার্জ মো. মাসুদ রানা জানান, ঈদে নতুন সব কালেকশন আনা হয়েছে।
রঙে তাঁতের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া হাতের কাজ করা সুতির শাড়ি ১২৫০-৩৫০০ টাকায়। পাঞ্জাবি ৮৫০-৩৫০০ টাকায়, মেয়েদের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-৫০০০ টাকা। বাচ্চা ছেলেদের পোশাক ৩৫০-২৫০০ টাকা এবং মেয়েদের পোশাক ৪৫০-৩৫০০ টাকা।
পুরুষের শার্ট ৫৫০-২০০০ টাকা, ফতুয়া ৮৫০-২৫০০ টাকা, লুঙ্গি ৩৫০-১৫০০ টাকা, টুপি ১৫০ টাকা, টি-শার্ট ৩৫০-১৫০০ টাকা বিক্রি করছে রঙ।
সৃষ্টি
শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯৯৮০ হাজার টাকা। পাঞ্জাবি ১১৯০-২৫৫০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ১৬৯০-৩১৫০ টাকা, বাচ্চাদের ফতুয়া, ৭৫০ টাকা, শার্ট ৪৫০ টাকা। ছেলেদের টি-শার্ট ৩৯০ টাকা পোলো শার্ট ৫৯০ টাকা, ফতুয়া ৯৯০ টাকা, লুঙ্গি ৫০০-১১০০ টাকা হাফ শার্ট ৭৫০ টাকা। এসআই/জেএইচ/পিআর