দেশজুড়ে

আগরতলার কালো পানিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আখাউড়াবাসী

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ময়লা-আবর্জনা ও রাসয়নিক পদার্থ মিশ্রিত ‘কালো পানি’র কারণে ক্রমশ হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র। রাসায়ানিক পদার্থ মিশ্রিত এ পানির কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন আখাউড়া উপজেলার আগরতলা সীমান্ত ঘেঁষা অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বৃষ্টির সময় দুর্গন্ধযুক্ত এ কালো পানি ছড়িয়ে পড়ে গ্রামগুলোর বিভিন্ন সড়কে। এতে দুর্ভোগ বেড়ে যায় আরও কয়েকগুন।

Advertisement

বিষাক্ত এ পানি ছাড়া বন্ধের ব্যাপারে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। রাসায়নিক মিশ্রিত এ পানি ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করে ছাড়ার কথা থাকলেও সেই প্ল্যান্ট এখনও হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন আগারতলা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন কালন্দি খাল দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে বিষাক্ত ‘কালো পানি’। আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্যযুক্ত বিষাক্ত পানি কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই কালন্দি খালে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ইটিপি প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিষাক্ত পানি পরিশোধন করে ছাড়ার কথা বলা হলেও প্ল্যান্ট আর হচ্ছে না। এর ফলে বছরের পর বছর ধরে আসা কালো পানির কারণে ধ্বংসের মুখে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র।

স্থানীয়রা জানান, বিষাক্ত কালো পানির প্রভাবে তারা অনেকেই নানা ধরনের রোগে ভুগছেন। নদীতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

Advertisement

তবে কালো পানির ক্ষতির কথা উল্লেখ করে স্থানীয়দের পাশাপাশি পরিশোধন ছাড়া কালন্দি খাল দিয়ে বিষাক্ত পানি ছাড়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরাও।

স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ কালো পানির সমস্য সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ত্রিপুরায় একটি ইটিপি প্ল্যান্ট করার কথা থাকলেও সেটি এখনও পর্যন্ত হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুসাব্বের হোসেন মো. রাজীব বলেন, ত্রিপুরায় ইটিপি প্ল্যান্ট করার ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, কালো পানির বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার ভারতকে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। ডিসি-ডিএম সভায় ভারতের সীমান্তবর্তী জেলার ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে আমরা অবহিত করেছি। সর্বশেষ গতবছরের সভার রেজুলেশনে আমাদের আপত্তির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি আগরতলায় একটি ইটিপির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ইটিপি প্ল্যান্ট কত দ্রুততার সঙ্গে হবে সেটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আবার যখন সভায় মিলিত হব তখন জানতে পারবো।

Advertisement

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস