বেড়েই চলছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্র থেকে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৪০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। যা পুরো অর্থবছরের জন্য সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
Advertisement
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে এখনো দ্বিগুণ মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শেয়ারবাজারে চলছে মন্দাভাব। তাই সঞ্চয়পত্রে ঝুকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ধরেছিল, তা ছড়িয়েছে আরও দুই মাস আগেই।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষ করছেন বিনিয়োগকারীরা। ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে প্রতিটি গ্রহকের। তাদের ধারণা আসছে বাজেটে সুদহার কমতে পারে তাই বাজেটের আগেই সঞ্চয়পত্র কিনছেন সাধারণ মানুষ। কারণ বাজেট পাসের আগে সঞ্চয়পত্র কিনলে বাড়তি হারেই মিলবে মুনাফা। এ আসায় সঞ্চয়পত্র কেনায় হিড়িক লেগেছে।
Advertisement
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সরকার চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। কিন্তু জুলাই-এপ্রিলে সময়েই ৪০ হাজার ৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এপ্রিলে মাসে এসেছে তিন হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
এদিকে গত এপ্রিলে জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ আসে ছয় হাজার ৫৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে থেকে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৫৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ফলে নিট ঋণ দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোতে নিট ঋণ ছিল মার্চে তিন হাজার ৫৮৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ১৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর আগের মাস জানুয়ারিতে নিট ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সঞ্চয়পত্রে বিক্রি বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম আর কারসাজির কারণে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যও তেমন ভালো না। এছাড়া ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহারের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি। যার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকেই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে।
Advertisement
সঞ্চয়পত্রের এ ঋণের টাকা সরকারকে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতি বিশ্লেষক। তা না হলে এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলেন প্রবীণ এ অর্থননীতিবিদ। কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহারসঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এসআই/বিএ