আন্তর্জাতিক

ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে যাচ্ছেন সিরিয়ানরা

দু'বছর আগে কয়েক লাখ অভিবাসী যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আবার সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, জার্মানিতে অনেক দিন থাকলেও সেখানকার সমাজের সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারছেন না।

Advertisement

একাধিক দেশের ভেতর দিয়ে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে যে পথে তারা ইউরোপে এসেছিলেন-ঠিক সেই সব বিপজ্জনক এবং অবৈধ চোরাই পথগুলো দিয়েই তারা আবার তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। এদেরই একজনের নাম জাকারিয়া। তিনি এবং তার দলের কয়েকজন গ্রিস সীমান্ত দিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করেন।

গ্রিসের পুলিশ অনেক সময়ই অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেবার চেষ্টাকারীদের আটক করে। গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে এরকম ১০-১২ জন সিরিয়ান নাগরিকের সাথে ধস্তাধস্তি এবং গ্রেফতারের দৃশ্যও লক্ষ্য করা গেছে।

এই দৃশ্য দেখলে অনেকে বিস্মিত হবেন। কারণ তারা গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করছেন না, যেমনটা দু'বছর আগে হাজার হাজার লোক করেছিল। বরং উল্টোটা হচ্ছে এখানে। তারা আসলে ইউরোপ ছেড়ে আবার সিরিয়ায় ফিরে যাবার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

তারা ইউরোপ ত্যাগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং সে জন্য যে অবৈধ পথে তারা এসেছিলেন-সেই অবৈধ পথেই আবার তুরস্ক হয়ে সিরিয়া ফিরে যেতে চাইছেন।

জার্মানির ব্যাডেন উর্টেমবার্গে ছিলেন জাকারিয়া। সেখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। তিনি বলেন, আমি এই দেশে এসেছিলাম দু'বছর আগে। আমি ভেবেছিলাম, এখানেই থাকব, জীবনে উন্নতি করব এবং জার্মানদের দেখিয়ে দেবো যে আমরা শুধুই শরণার্থী নই।

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি এখানে একজন বহিরাগত। জার্মান সমাজের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ তৈরি হয়নি। আমরা এ সমাজে মিশতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি জার্মানরা খুবই শীতল, তারা আমাদেরকে গ্রহণ করার চেষ্টাও করতে চায় না।

তিনি বলেন, আমি যা অর্জন করবো ভেবেছিলাম তার কিছুই করতে পারিনি-এক শতাংশও নয়। শুধু আমার ক্ষেত্রেই যে এমন হয়েছে তা নয়। এরকম আরো অনেক আছে।

Advertisement

তাই আমি ঠিক সেই চোরাই পথ দিয়েই সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছি-যে পথ দিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম। জাকারিয়া গ্রিসের থেসালোনিকি শহরে পৌঁছেছেন। এই শহরের বাস স্টেশনটি জাকারিয়ার মতো সিরিয়ানদের জন্য যানবাহনের একটা বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মনে করা হয়, এ পথ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে শত শত লোক যাচ্ছে।

জাকারিয়া বলেন দেশে ফেরার জন্য পথে নেমেই তিনি কতটা উত্তেজিত। আমি এত অধীর হয়ে উঠেছি যে-দেশে পৌঁছানোর জন্য আমার তর সইছে না। যদিও এই পথটা কঠিন, এর ওপর আছে ঠান্ডা আর বৃষ্টি।

এখানে ৫০ জনেরও বেশি সিরিয়ান জড়ো হয়েছে যারা সিরিয়ার পথে তুরস্ক সীমান্তের উদ্দেশ্যে পাঁচ ঘন্টার এই বাস-যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এদের মধ্যে শিশুরা আছে, একাধিক পরিবার আছে, অনেক নারী আছে যাদের কোলে শিশু।

জাকারিয়া যখন গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। অবৈধ পথ দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে তুরস্কে ঢোকার এটাই সময়। এ জন্য সিরিয়ানদের দলটি তৈরি হচ্ছে। সবারই ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা-কারণ এই পথ দিয়ে সীমান্ত পার হতে গিয়ে অনেকেই এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

সীমান্ত পেরোনোর আগে জার্মানির উদ্দেশ্যে জাকারিয়ার শেষ বার্তা ছিল- আমার জন্য জার্মানি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আমরা মুসলিম, কিন্তু ওরা বলে আমরা সন্ত্রাসী। আমাদের দেখলে তারা ভয় পায়-যেন আমরা কোন দানব, মানুষ নই। জাকারিয়াসহ পুরো দলটির সবাই নিরাপদে সীমান্ত পার হতে পেরেছেন।

টিটিএন/জেআইএম