মানালি থেকে রাতের বাসে শিমলা। রাত ১০টার বাস যখন ছাড়লো, তখন ভেবেছিলাম ভোরে পৌঁছাবো। কিন্তু ৪টা না বাজতেই বাস নামিয়ে দিলো শিমলা বাসস্ট্যান্ডে। গুগল ম্যাপে দেখলাম বুকিং দেওয়া হোটেল বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশ দূরে।
Advertisement
ভোর রাতে অনেক হোটেল ঘুরে এক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বাসস্ট্যান্ডের কাছেই হোটেল পেলাম। সাথে ট্যাক্সিতে সারাদিন ঘোরার প্যাকেজ। হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। ট্যাক্সি ছুঁটে চলছে কুফরির উদ্দেশে।
শিমলার শীত তখনো কাটেনি। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথ ধরে গাড়ি ছুটে চলছে। ছিমছাম শহর শিমলা। পুরো শহরটি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে উঠেছে। সমতল বলে কিছুর দেখা পেলাম না।
আরও পড়ুন- বরফের পাহাড়ঘেরা সোলাং ভ্যালি
Advertisement
কুফরিপাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি করা পথ ধরে পৌঁছে গেলাম কুফরিতে। এখান থেকে ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে একদম উপরে। সেখানেই নাকি শিমলার সত্যিকারের সৌন্দর্য। ৫০০ টাকা করে জনপ্রতি টিকিট নিয়ে উঠে পড়লাম ঘোড়ায়। ধুলোমাখা সরু পথ। সারি সারি ছোট পাথর। ভয়ংকর সে পথ। নারী পর্যটকদের রোমাঞ্চকর চিৎকার। ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম কুফরিতে। শুনেছিলাম এখানেও নাকি মানালির মতো বরফের দেখা মিলবে। কিন্তু বাস্তবে তার পুরোটাই উল্টো। কোথাও কোনো বরফ নেই।
পাহাড়ের উপরে কেবলই কিছু ছোট ছোট দোকান। অবস্থা দেখে মনে হলো, পর্যটকরা এখানে কেনাকাটাই করতে এসেছেন। ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে উপরে এসে অনেকটাই হতাশ। এবার ফিরতে হবে নিচে। ঘোড়ায় চড়ে উপরে ওঠা যত না কষ্টকর, নিচে নামতে নাকি তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর। নিচে নেমে সে অনুভূতিই হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এবারের মতো কোনো দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরলাম।
গ্রিন ভ্যালি থেকে ফাগু ভ্যালিকুফরি থেকে ফিরতে দুপুর হয়ে গেছে। পথেই গ্রিন ভ্যালি, ফাগু ভ্যালি। পাহাড়ের রাস্তার একপাশে সারি সারি গাছ অন্যপাশে ঢালু পাহাড়। এ নিয়েই এই দুই ভ্যালি। পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে পেয়ে গেলাম বাঙালি খাবার। এবারের গন্তব্য মল রোড।
আরও পড়ুন- বিমানে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা দিল্লি
Advertisement
মল রোডট্যাক্সি ড্রাইভার নামিয়ে দিলেন এক লিফট কাউন্টারের সামনে। লিফট কেন? লিফট দিয়েই নাকি পাহাড়ের ওপর উঠতে হবে। সেখানেই মল রোড। ১০ টাকা করে জনপ্রতি টিকিট সংগ্রহ করে লাইনে দাঁড়িয়ে লিফটে পৌঁছে গেলাম মল রোডে। মানালির মতোই সুন্দর শিমলার মল রোড। রাস্তার পাশে বসার জন্য ছোট ছোট ব্র্যাঞ্চ। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। ছোট ছোট দোকান। সেখানে পর্যটকদের ভিড়। শিমলার শাল (চাদর) নাকি খুবই ভালো। মল রোড ঘুরেই তার প্রমাণ পেলাম। পাহাড়ের ঢালু পথ ধরে মল রোডে নেমে গেছে নিচের পাহাড়ে। রাস্তার একপাশে পাহাড় অন্যপাশে হরেক রকম পণ্যের দোকান।
শিমলার দর্শনীয় জায়গাগুলো আমাদের কাছে তেমন আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তবে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে ওঠা শিমলা শহর খুবই সুন্দর। রাতে বাসে ফিরছি দিল্লি।
এএ/এসইউ/জেআইএম