পাকিস্তানে নির্বাচনের আর কয়েক সপ্তাহ বাকী আছে। এরই মধ্যে ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়েছে দেশটির সবচেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় পত্রিকা ডন। শহর এলাকায় পত্রিকাটির বিতরণ বন্ধ রয়েছে। এর কারণ এসব এলাকা গুলোর বেশিরভাগই সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থা শুধু ডন পত্রিকারই নয়, গত মার্চে জিও টেলিভিশন নেটওয়ার্কেরও একই দশা হয়েছিল।
Advertisement
এই দুটি ঘটনাই আসলে সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও প্রতাপশালী সেনাবাহিনীর মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধেরই বহিঃপ্রকাশ। পাকিস্তানের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পত্রিকার বিতরণ বন্ধে কোন ধরনের আদেশ দেয়নি। তাই সঙ্গত কারণেই দৃষ্টি চলে যাচ্ছে সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। ডনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে মূলত নওয়াজ শরীফের একটি সাক্ষাতকারকে কেন্দ্র করে। চলতি মাসের শুরুতেই ওই সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়।
পাকিস্তানি জঙ্গিদের সীমান্ত অতিক্রম করে মুম্বাইয়ে ১৫০ জনকে হত্যার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নওয়াজ। তিনি জানতে চেয়েছেন, কেন পাকিস্তান ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সাথে জড়িতদের বিচার করলোনা? অথচ তারা পাকিস্তানেই আটক হয়েছিল। এসব মন্তব্যের কারণেই মনে করা হচ্ছে যে, সামরিক বাহিনীর দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। জিও টেলিভিশন নেটওয়ার্ককেও একই কারণে শাস্তি পেতে হয়েছে।
টেলিভিশনটির এক রিপোর্টার নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা নিয়মিত ফলো করছিলেন এবং এ বিষয়ে গোপন তথ্য বের করে আনেন। তার মতে যে কারণে নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে তার ভিত্তি আসলে খুবই দুর্বল।
Advertisement
সমালোচকরা বলেন যে, সামরিক বাহিনী গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় যখন তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আর এর প্রথমটি শরীফ নিজেই তৈরি করেছেন। কারণ তার জনপ্রিয়তার কমতি দেখা যাচ্ছিলো না। এটাই সেনাবাহিনীকে বিব্রত করে তোলে কারণ তাদের কাছে মনে হচ্ছিলো যে এখনই না থামালে সামনের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হতে পারেন। আরেকটি হলো উপজাতি এলাকাগুলোতে আন্দোলন বেড়ে যাওয়া। এসব আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও যুদ্ধগুলো কীভাবে হয় ও স্থানীয়রা সেজন্য কী মূল্য দেয় এমন প্রশ্ন উঠছিল।
নওয়াজ শরীফ ১৯৯০ সালের পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ক্ষমতার শক্তিগুলোর সঙ্গে তার যোগাযোগ আশির দশকে জেনারেল জিয়াউল হক যখন তাকে পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী বানান তখন থেকেই। সামরিক বাহিনীর সাথে একটি যোগসূত্র তারও ছিলো। আবার ১৯৯৯ সালে আলোচিত কারগিল যুদ্ধের ভেতরের গল্পও তার জানা কারণ তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও তখন সে যুদ্ধের সূচনা করেছিলো।
নওয়াজ শরীফ অনেকবারই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধটি ছিলো পরিকল্পিত যা বাস্তবায়ন করেছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ। যদিও এর বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি। বিশ্লেষকদের বিশ্বাস নওয়াজ শরীফ ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি ঠেকাতেই ওই যুদ্ধ।
আশির দশক থেকেই দেশটিতে সেনাবাহিনীই বড় ব্যবসায়িক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একই সাথে রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও তাদের নিয়ন্ত্রণে। নওয়াজ এখন সামরিক বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিব্রতকর সত্যগুলো নিয়ে। অথবা হয়তো তিনিও একটি সমঝোতা চুক্তি চাইছেন এর মাধ্যমে। কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার যে গণমাধ্যমকে এভাবে কখনোই চাপের মুখে থাকতে হয়নি এবং নওয়াজের দলকে ভাঙ্গার একটি চেষ্টা চলছে আগামী নির্বাচনের আগেই।
Advertisement
টিটিএন/পিআর