জাতীয়

অভিমানী বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের নীরব প্রস্থান!

বহুল আলোচিত বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার অভিমান করে কাউকে কিছু না বলে নীরবে হাসপাতাল ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

Advertisement

ফলে প্রতিদিনের রুটিন মাফিক মর্নিং শিফটের কর্তব্যরত নার্স তার কক্ষে গিয়ে বেড ফাঁকা দেখতে পান।

ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কি কারণে সে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলো তা বুঝলাম না। তবে সে কয়েকদিন ধরে বাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। গত সপ্তাহে তাকে বলেছিলাম অস্ত্রোপচার করতে হবে। সে শনিবার অস্ত্রোপচার করবে কিনা জানানোর কথা থাকলেও ভোরেই চলে যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ২৭ বছর বয়সী আবুল বাজানদার ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন। সে ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রোম নামে পরিচিত যা জিনগত সমস্যার জন্য হয়।

Advertisement

বাজানদার এ রোগেই ভুগছিলেন। তখন তার হাত-পা স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। গাছের শিকড়ের মতো শক্ত অতিরিক্ত অংশ দুই হাত ও পা বদলে দিয়েছিল। এরপর তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর পর থেকে থাকা-খাওয়া, ওষুধ, অপারেশন কোনোকিছুর জন্যই আবুলকে অর্থ খরচ করতে হয়নি। সব খরচ বহন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পেশায় ভ্যানচালক আবুল বাজানদারের প্রথমে আচিল হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়াতে থাকে। এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস ভাইরাসে আক্রান্ত তিনি। এ রোগের কারণে গত ৭ বছর কোনও কাজই করতে পারতেন না। হতদরিদ্র আবুলের অবস্থা দেখে চিকিৎসক ডা. কবির হোসেন তাকে বাড়ি বানাতে ছয় লাখ টাকা দেন।

তার হাত ও পায়ে গাছের শিকড়ের মতো শক্ত অতিরিক্ত অংশ ছিল। ঢামেকে ভর্তির পর নিয়মিত বিরতি দিয়ে মোট ২৫ বার হাতে পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। আগের তুলনায় বহুগুণ সুস্থ হলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি আবুল।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আবুল বাজানদারের নীরবে হাসপাতাল ত্যাগের কারণ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার। চিকিৎসা শুরুর প্রথমদিকে তার সঙ্গে ব্যবহার আর বর্তমানের ব্যবহারে আকাশ পাতাল ফারাক বলে সে অনেককে জানিয়েছেন। তাকে ঠিকমতো খাবার দেয়া হত না। খাবারের জন্য তাকে অনেকের পিছু পিছু ঘুরতে হয়েছে। এ কারণে সে নীরবে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে।

Advertisement

এমইউ/এএইচ/জেআইএম