ধর্ম

রোজায় ইফতার বিতরণ ও আর্থিক অনুদানের তাৎপর্য

পবিত্র রমজান মাসে সাহরি ও ইফতার গ্রহণ রোজার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও ইবাদত। উভয় কাজেরই রয়েছে আলাদা আলাদা ফজিলত ও তাৎপর্য। রাতের শেষ সময়ে সাহরি গ্রহণ যেমন মানুষের জন্য বরকত ও কল্যাণের কাজ। তেমনি ইফতারও অনেক ফজিলতপূর্ণ সাওয়াবের কাজ।

Advertisement

আর যদি কেউ কাউকে ইফতার করায় তার জন্য রয়েছে অতিরিক্ত সাওয়াব ও তাৎপর্য। যাতে ইফতার গ্রহণকারী ও ইফতারের আয়োজনকারী কারোরই সাওয়াব কমানো হবে না। রোজাদার গরিব কিংবা ধনী হোক, বন্ধু হোক বা আত্মীয়, দূরের বা কাছের, সে যে-ই হোক না কেন, তাকে ইফতার করালে তাতে উভয়ের জন্য রয়েছে বড় উপকার।

রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো সাওয়াব বৃদ্ধি এবং গোনাহ মাফের আমল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

হজরত যায়েদ ইবনে জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করালো, তারও রোজাদারের ন্যায় সাওয়াব হবে; তাতে রোজাদারের সাওয়াব বা নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)

Advertisement

আরও পড়ুন > রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যে রোজাদারকে ইফতার করালো, তাকে পানাহার করাল, তাকেও রোজাদারের সমান সাওয়াব দেয়া হবে; তাতে তার (রোজাদারের) নেকি বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না। (তাবরানি, মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক)

ইফতারের জন্য কেউ কাউকে দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করায় রয়েছে কল্যাণ। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দাওয়াত গ্রহণের একটি বর্ণনা তিনি নিজ ভাষায় তুলে ধরেন-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁকে এক মহিলা ইফতারের জন্য দাওয়াত করলো, তিনি তাতে সাড়া দিলেন এবং বললেন, ‘আমি তোমাকে (মহিলাকে) বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সাওয়াব হবে।

Advertisement

মহিলা বলল, ‘আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন, বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন, ‘আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার অর্জন করুক। (মুসান্নেফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)

আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম

রমজান মাস ও রোজা বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার এক মহা অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা এ মাস ও রোজাকে কেন্দ্র করে বান্দার জন্য কল্যাণ ও অনুগ্রহ লাভের অনেক ক্ষেত্র ও মাধ্যম তৈরি করেছেন। যে সবের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ অনুগ্রহ ও কল্যাণ লাভ করতে পারবে। রোজাদারকে ইফতার করানো এ সব অনুগ্রহের একটি।

রোজা পালনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা কোনো প্রতিদান বা পুরস্কার ঘোষণা না করে তা তিনি নিজে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। আর পরকালে রোজাদার জন্য আলাদা করে ‘রাইয়্যান’ জান্নাত নির্মাণ করেছেন। যে জান্নাতে রোজাদার ব্যতিত আর কেউ স্থান পাবে না।

ইফতার গ্রহণের দাওয়াত আসলে তা গ্রহণ করায়ও রয়েছে সাওয়াব। এ সাওয়াব প্রদানে আল্লাহ তাআলা কাউকেও কম বেশি করবেন না। বরং সবাইকে সমান সাওয়াব দান করবেন।

আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া

খেয়াল রাখতে হবেইফতারের নামে কোনোভাবেই যেন খাবারের অপচয় না হয়। ইফতারের গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের আমন্ত্রণ করা জরুরি।

আবার কেউ যদি কোনো গরিব রোজাদারকে ইফতারের জন্য আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে; তাতে সে ওই টাকায় ইফতারও করল; আবার কিছু অর্থ বাচিয়ে তা দিয়ে সাবলম্বী হলো; এটাও ইফতার করানোর ফজিলতের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর গরীব ব্যক্তিও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।

ইফতারের দাওয়াত যদি অসহায় গরিব-দুঃখীর জন্য হয়, তবে সেখানে ধনী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ না করাই ভালো।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর রোজাদারদেরকে পারস্পরিক দাওয়াত ও সদাচরণ বিনিময়ের তাওফিক দান করুন। অস্বচ্ছল, গরিব-দুঃখীর মাঝে ইফতার, ইফতার সামগ্রী এবং অর্থ দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর