বিশেষ প্রতিবেদন

ঢামেকের দেয়া সার্টিফিকেটের ৬০ ভাগই ভুয়া!

ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট কেনাবেচার আখড়া হিসেবে গড়ে উঠছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)। আর এসব ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে থানায় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলা করা হচ্ছে। ফলে সঠিক বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি প্রকৃত চিকিৎসকদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

Advertisement

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেকের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটের শতকরা ৬০ ভাগই ভুয়া। হাসপাতালের এক শ্রেণির অর্থলোভী ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এ কাজ হরহামেশাই ঘটছে। উপযুক্ত তদারকি ও শাস্তি না পাওয়ায় ভুয়া সার্টিফিকেট কেনাবেচার সংঘবদ্ধ চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।হাসপাতালের মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারের তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৮শ ৭০টি সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশর কিছুটা বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢামেকের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, প্রকৃত সার্টিফিকেটের সংখ্যার চেয়ে ভুয়া সার্টিফিকেটের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এসব ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে থানায় খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এ সকল মামলায় বিজ্ঞ বিচারকের সন্দেহ হওয়ায় সার্টিফিকেটগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। গত দেড় বছরে ঢামেক থেকে ইস্যুকৃত তিন শতাধিক মেডিকেল সার্টিফিকেট যথার্থ কিনা তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছেন আদালত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ ও ভেতরে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির জন্য মক্কেল ধরতে ওৎ পেতে থাকে চক্রের সদস্যরা। সংঘর্ষ অথবা নির্যাতনে ফলে আহত কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে তারা প্রথমে সহযোগিতার ভান করে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে খাতির জমায়। মামলা করার ইচ্ছে রয়েছে জানতে পারলেই মেডিকেল সার্টিফিকেট পাইয়ে দেয়ার কথা বলে চুক্তি করে। মেডিকেল ইনজুরি সার্টিফিকেট দুই ধরনের সিম্পল কাট ও সার্প কাট (সাধারণ ও গুরুতর জখম) হয়ে থাকে। সার্টিফিকেট ভেদে মক্কেলের কাছ থেকে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে ২০ হাজার টাকাও নিয়ে থাকেন তারা। পরে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের নাম, পদবী ও স্বাক্ষর নকল করে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হয়। আউটডোর, ইনডোর, রিলিজ সার্টিফিকেট ও কাগজপত্রে একজন পাস করা চিকিৎসকের মতোই রোগীর চিকিৎসার বিবরণ লেখা থাকে। যা দেখে সহজে বোঝার উপায় থাকে না যে সার্টিফিকেটটি ভুয়া।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানকালে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটের কিছু নমুনা কপি হাতে এসেছে। রোগী জেরিন (৪০)। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭৪৬/২৪০৯৬। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেডিসিন বিভাগের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে বরগুনার পাথরঘাটা থানায় নারী নির্যাতন মামলা হয়। মামলা চলাকালে আদালতের নির্দেশে পাথরঘাটা থানা থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেটটি যথার্থ কিনা জানতে চেয়ে ঢামেক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় এ নামে ওই সময়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে কোনো রোগীই ভর্তি ছিলেন না।রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নম্বর ৩৪০/১৫। রোগিনী নাজমা আক্তার (২১)। ঢামেক হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৭৮/১৩৭০৮। ২৬ এপ্রিল নাজমা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে মামলায় উল্লেখে করা হয়। যাচাইকালে দেখা যায় ভুয়া টিকেটে ভুয়া চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা ও ইনজুরি সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নাজিমুন নেসার কাছে জানতে চাইলে তিনি ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ইস্যু হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে শতকরা কতভাগ ভুয়া তা বলতে রাজি হননি তিনি।এমইউ/এএইচ/এমএস/আরআইপি

Advertisement