অর্থনীতি

‘কাঁচাবাজার তো নয়, যেন মগের মুল্লুক’

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার। থলে হাতে বাজার করতে এসেছেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আমীন। বেশ কিছুক্ষণ পুরো বাজার ঘুরেও কোনোভাবেই হিসাব মেলাতে পারছেন না তিনি। শেষমেশ জানতে চাইলেন বেগুনের কেজি কত? ‘৫০ টাকা’, উত্তর সবজি বিক্রেতার। এবার আর মেজাজ ধরে রাখতে পারলেন না ভদ্রলোক। দোকানির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন জড়িয়ে মোহাম্মদ আমীন।

Advertisement

চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘রিয়াজ উদ্দিন বাজারের ২০ টাকার বেগুন বহদ্দারহাটে ৫০ টাকা হয় কী করে? এটা কি বাজার না কি মগের মুল্লুক?

শুধু মোহাম্মদ আমীন নয়, চট্টগ্রাম নগরের বাজারগুলোতে এভাবে প্রতিদিন সবজির দাম নিয়ে তর্কে জড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এতে কোনো ধরনের চিন্তাই নেই সবজি বিক্রেতাদের। চিৎকার-চেঁচামেচির পর মোহাম্মদ আমীনের প্রতি সবজি বিক্রেতার উত্তর ছিল, ‘ন পোষাইলে য গই, এডে ন চিল্লাইও’ (না পোষালে চলে যান, এখানে চিৎকার করেন না)।

নগরীর প্রায় সবগুলো বাজারে বাজার করতে গিয়ে দামের এমন ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় নাকাল হওয়ার ঘটনা সবার ক্ষেত্রেই কম-বেশি ঘটছে। সেইসঙ্গে পণ্যের দামের পার্থক্যও ক্রেতাকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়।

Advertisement

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আড়ত থেকে বেরুলেই দুই-তিন গুণ দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারগুলোতে। তবে জেলা প্রশাসনের মনিটরিংয়ের কোনো প্রভাব কাঁচাবাজারগুলোতে নেই বললেই চলে। নির্দেশনা থাকলেও নগরের খুচরা বাজারগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানো নেই।

শনিবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টা। নগরের সবচেয়ে বড় সবজি আড়ত রিয়াজ উদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গোল ও লম্বা বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ১৫-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটল ১৬-১৮, কাকরোল ১০-১৫, পেঁপে ১৬-১৮, বেগুন ১৫-৩২, লাউ ৬-৮, বরবটি ১২-১৫, শসা ১৮-২০, ঝিঙে ১৩-১৫, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮-১৫, মিষ্টি কুমড়া ৬-১০, কচুর লতি ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু দেড় কিলোমিটার দূরত্বের কাজির দেউড়ি বাজারের ঠিক তার উল্টো চিত্র। এখানে কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০, বেগুন ৫০-৫৫, দেশি টমেটো ৬০-৬৫, পটল ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৪৫-৫০, মিষ্টি কুমড়া (পাকা) ২০, কাঁচা ৪৫, পেঁপে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বরবটি ৫৫, শসা ৫০-৫৫, ঝিঙে ৪৫৫০, চিচিঙ্গা ৪৫, চাল কুমড়া ৫৫-৬০, মুলা ৪৫, কচুর ফুল ৫৫, শসা ৩০-৩৫, তিতকরলা ৪০-৫০, ঝিঙে ৪০-৫০, পটল ৩০-৪০, আলু ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

Advertisement

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মেসার্স মক্কা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মোসলেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোজার শুরুতে বৃষ্টির কারণে সবজির আমদানি কম থাকলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিক। আড়তে সবজির দাম অনেক কম। তবে খবর পেয়েছি খুচরা বেপারিরা আড়ত থেকে কিনে দুই-তিন গুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন।’

পাইকারি বাজার তো খুচরা বাজার থেকে দূরে নয়, তবুও কেন এই দামের পার্থক্য? এমন প্রশ্নের জবাবে সবজি বিক্রেতা হিরণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসতে একেকজনের একেক রকম খরচ পরে। তাই দামের এই ভিন্নতা।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মূলত ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী। বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে রাখতে চান তারা। কাঁচাবাজারগুলোতে সব সময় পাইকারি দোকানের সাথে মূল্য পার্থক্য অনেক বেশি থাকে। তাই বাজার মনিটরিং চলাকালে মূল্য বেশি আদায়কারী ব্যবসায়ীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি মালামাল জব্দ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।'

‘প্রয়োজনে সকাল-বিকেল ও সন্ধ্যার পর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মাঝে মধ্যে বাজারে তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হলে এবং বাজার মনিটরিংয়ে মোবাইল কোর্টের সময়কাল বাড়িয়ে দেয়া হলে অনিয়ম সম্পর্কে খোঁজ-খবর সহজে পাওয়া যাবে।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিনেই জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অনেককে সাজাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত তো সারাদিন বাজারে থাকে না। যতদূর জেনেছি, আমি বাজার থেকে বেরুলেই দাম বাড়িয়ে দেয় বিক্রেতারা। এমনকি মূল্য তালিকাও লুকিয়ে ফেলে। আমরা এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার চেষ্টা করছি।’

আবু আজাদ/এসআর/এমএস