রোজা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে মুসলমানের রোজা পালনকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। তবে যারা রমজান মাসে প্রয়োজনে সফর করবেন তাদের জন্য রোজা পালনে রয়েছে বিশেষ ছাড়।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজা পালন করা না করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘রমজান মাস; সেই মাস, যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। যা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক ও যাতে রয়েছে হেদায়েতের নিদর্শনসমূহ এবং যা হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।
অতএব তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে তাকে অবশ্যই এ মাসে রোজা রাখতে হবে।
আর যে অসুস্থ বা মুসাফির হবে সে অন্য সময় (রোজা পালন করে) সংখ্যা পূরণ করবে। যা সহজ আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য তাই ইচ্ছা করেন এবং যা কঠিন তিনি কোনো দিন তার ইচ্ছা করেন না, যেন তোমরা নির্ধারিত সময়টি সম্পূর্ণ করতে পার এবং যেহেতু আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে হেদায়েত করেছেন এ জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
Advertisement
কুরআনের উল্লেখিত আয়াতে মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমজান রাখায় ছাড় রয়েছে। আল্লাহ তাআলাই মানুষকে সফরের অবস্থায় রোজা না রাখার সুযোগ দিয়েছেন। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক মহাঅনুগ্রহ। তবে সফরে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম।
আরও পড়ুন > ইফতারের সময় দোয়া কবুলে প্রিয়নবির ঘোষণা
হজরত আছিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সফরকালে রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘যে রোজা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করলো। আর যে রোজা রাখল সে উত্তম কাজ করলো।’
রমজান মাসের সফরে কিছু করণীয় রয়েছে। যা পালন করা আবশ্যক। সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো->> সফরের সময় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয নাই। কেউ ভেঙ্গে ফেললে গোনাহগার হবে। তবে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘কেউ রোজা রেখে সফরে বের হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে যদি পিপাসার কারণে প্রাণের আশঙ্কা হয় তাহলে রোজা ভাঙ্গতে পারবে, পরে তা কাযা করবে।’
Advertisement
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া
>> কোনো ব্যক্তি যদি সফরের কারণে রোজা না রাখে; কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই সে মুকিম হয়ে যায়। তাহলে দিনের অবশিষ্ট সময় রমজানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। পরবর্তীতে অবশ্যই এ রোজার কাজা করতে হবে।
>> প্রতিটি মুসলিমের জন্য সে যেখানে থাকবে সেখানেই তার নামাজ এবং রোজার হুকুম বর্তাবে। তাই রোজাদার যেখানে থাকবে, সে স্থানেই রোজা রাখবে বা ছাড়বে। চাই সে জমিনের ওপর থাক কিংবা বিমানে থাক অথবা জলপথে নৌযানে থাকুক।
আরও পড়ুন > রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া
>> সাধারণভাবে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় রোজা না রাখাই উত্তম। আর রমজানের সময় সফরের হালতে রোজা রাখা ও না রাখা যদি বরাবর হয় তবে রাখাই উত্তম। আর যদি রোজা রাখা কষ্টকর হয় তবে না রাখাই উত্তম। কিন্তু ‘যদি বেশি কষ্ট হয়, তবে রোজা না রাখা ওয়াজিব এবং পরে তা কাযা করে নিবে।
পরিশেষে...বিশ্বনবির ছোট্ট একটি হাদিস দিয়ে শেষ করতে চাই, হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। রোজাদার বে-রোজাদরকে এবং বে-রোজাদর রোজাদারকে কোনো প্রকার দোষারোপ করেন নাই।’ তাই সফরে কষ্টকর হলে রোজা ভাঙতে কোনো দোষ নেই। সম্ভব হলে রোজা রাখাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফরের সময় অবস্থানুযায়ী রোজার হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম