মতামত

টিকিট যেন সোনার হরিণ না হয়

ঈদে নাড়ির টানে যারা বাড়ি যান তাদের কাছে খুব কাঙ্খিত বিষয় হচ্ছে বাস, লঞ্চ, বা ট্রেনের টিকিটের সহজ প্রাপ্তি। ঘরমুখোদের এ স্বাভাবিক প্রত্যাশা থাকলেও প্রাপ্তির বেলায় এর বিস্তর ব্যবধান ঘটে। অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু না হতেই পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। রাতভর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাওয়া যায় না। অথচ বেশি দামে সেই টিকিটই কালোবাজারিতে পাওয়া যায়। ফি বছর এ অবস্থা চললেও এ বছর তা থেকে উত্তরণ ঘটবে- সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

Advertisement

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১ জুন থেকে। অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের প্রস্তুতি বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেলভবনে সংবাদ সম্মেলন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এ কথা জানান। আর ফিরতি টিকেট বিক্রি ১০ জুন শুরু হয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে বলেও জানান মন্ত্রী। টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন ১ জুন পাওয়া যাবে ১০ জুনের টিকিটি, ২ জুন পাওয়া যাবে ১১ জুনের, এরপর ৩ জুন, ৪ জুন, ৫ জুন ও ৬ জুন পাওয়া যাবে যথাক্রমে ১২ জুন, ১৩ জুন, ১৪ জুন ও ১৫ জুনের টিকিট। মুজিবুল হক বলেন, ‘ঈদ শেষে ফিরতি টিকেটের ক্ষেত্রে যারা ১০ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ১৯ জুন, যারা ১১ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ২০ জুন, যারা ১২ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ২১ জুন, যারা ১৩ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ২২ জুন, যারা ১৪ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ২৩ জুন ও যারা ১৫ জুন টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ২৪ জুন ভ্রমণ করতে পারবেন।’ রেলমন্ত্রী বলেন, ‘একজন যাত্রী ৪টির বেশি টিকেট পাবেন না। ঢাকা স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা রাখা হবে। এরমধ্যে দুটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।’

অতীত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বিক্রির শুরুর দিনই টিকিট সংকট দেখা দেয়। ট্রেন, লঞ্চ, বাস সবক্ষেত্রেই একই অভিযোগ। ট্রেনে কোটা পদ্ধতির কারণে সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিআইপিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ দেওয়া টিকিট নিজেরাই কিনে নিয়ে উচ্চ দামে তা যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। এছাড়া টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ তো অনেক পুরনো। দেখা যায় সারারাত টিকিটের জন্য অপেক্ষা করেও যাত্রীরা টিকিট পায় না। আবার বেশি মূল্য দিলেই ভিন্ন পথে তা পাওয়া যায়। এই কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। যাত্রীরা যাতে সহজেই টিকিট পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হবে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধ করতে হবে। এছাড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইনের ব্যাপারে। ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যাতে চলতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করাও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যাত্রী সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি।

দূরপাল্লার বাসগুলো যাতে ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষকে নজরদারি চালাতে হবে। অননুমোদিত বাস চলাচলের ব্যাপারেও দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ঈদে মুনাফার লোভে লোকাল বাসও হাইওয়েতে চলে। এগুলোর ফিটনেস না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তা থেকে নষ্ট বাস সরানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এ কারণে দেখা দেয় তীব্র যানজট।

Advertisement

বিপুল সংখ্যক মানুষ যারা মাটির টানে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন তাদের আনন্দ যেন যাত্রাপথের ভোগান্তিতে নষ্ট না হয়ে যায় সেইদিকে নজর দেওয়াই এখনকার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কোনো উদাসীনতা কাম্য নয়।

এইচআর/জেআইএম