অর্থনীতি

নির্বাচনী বছরে বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা

ধারাবাহিক দরপতন আর লেনদেন খরায় অনেকটাই নিষ্প্রাণ দেশের শেয়ারবাজার। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য দেয়া বিশেষ সুবিধা এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জেকে পাওয়ার মতো সুখবরও বাজারে প্রাণ ফিরছে না।

Advertisement

ক্রমাগত শেয়ারের দরপতনে একটু একটু করে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমে আসছে। পুঁজি হারানোর শঙ্কার পাশাপাশি আস্থার সংকট জেঁকে বসেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে।

কী কারণে শেয়ারবাজারের এমন চিত্র- তা নিয়ে জাগো নিউজের পাঁচ পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে তৃতীয়টি।

আরও পড়ুন >> নিষ্ক্রিয় আইসিবি

Advertisement

সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে চলতি বছর হলো নির্বাচনের বছর। নির্বাচনের বছরে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় শেয়ারবাজারসহ সার্বিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এমনটাই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসেটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। যে কোনো বিষয়ের প্রভাব শেয়ারবাজারে দেখা যায়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দেয়, চলে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারসহ সার্বিক আর্থিক খাতে।

এবারও নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে শঙ্কা, দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দলটি যদি আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আবারও রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দেবে কিনা- তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ফলে কিছুটা নীরব অবস্থায় আছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।

এছাড়া শেয়ারবাজারে একটি গ্রুপ রয়েছে যারা বর্তমান সরকারের মতাদর্শের বিরোধী। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা শেয়ারবাজারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতেও ওই চক্র বিনিয়োগের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে বেড়েছে তারল্য সংকটের পরিমাণ। যে কারণে দেখা দিয়েছে টানা দরপতন।

Advertisement

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা- সে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। কারণ বিএনপির একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে। আর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের যে মনোভাবে তাতে নির্বাচনের আগে তার ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ অবস্থায় বিএনপি ছাড়া সরকার নির্বাচন আয়োজন করলে আবারও দেশে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা ছাড়াও শেয়ারবাজার ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেও একটি চক্র তৎপর রয়েছে। অতীতেও এ চক্র শেয়ারবাজারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। গত নির্বাচনের আগে এ চক্রের অধিকাংশ সদস্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করে নিষ্ক্রিয় থাকে। আবার ২০১০ সালের ধস এবং তার আগের উত্থানেও এ চক্রের হাত ছিল। এবারও নিশ্চয় তারা নতুন ফন্দি আঁটবে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে কী হবে তা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি আসেবে না- তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের পেছনে রাজনৈতিক এ প্রভাব একটি কারণ বলে আমার মনে হয়।’

আরও পড়ুন >> দুরবস্থায় ব্যাংক খাত

‘এছাড়া সামনে ঈদ। কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে খরচের টাকা জোগাড় করবেন। এতে শেয়ার বিক্রির একটা চাপ আছে। তবে এটি শেয়ারবাজারের টানা দরপতনের জন্য খুব একটা বড় কারণ নয়। আমি মনে করি এ মুহূর্তে টানা দরপতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই’- যোগ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে বলন, ‘শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য নির্বাচনী বছরই সবচেয়ে বড় কারণ। এ বছর যতই প্রণোদনা দেয়া হোক বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে। কারণ সবার মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে।’

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘২০১৮ সাল হলো নির্বাচনী বছর, সুতরাং অনিশ্চয়তা তো রয়েছে। অনিশ্চয়তার সময় বাজার স্বাভাবিক থাকে না। এ বছর অনিশ্চয়তাটা অনেক বেশি। এটি হলো রাজনৈতিক। সবার অংশগ্রহণে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে- এটা বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না। এ অনিশ্চয়তার একটি প্রভাব শেয়ারবাজারে রয়েছে।’

ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন বলেন, ‘নির্বাচনী বছর হওয়ায় সবাই নিরাপদ স্থানে থাকতে চাচ্ছেন। প্রত্যেকের একটা রাজনৈতিক আদর্শ ও মতাদর্শ আছে। মার্কেট যদি পড়ে যায় অবশ্যই তারা (সরকারবিরোধী) রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে। মার্কেট যদি আরও খারাপ হয় তাহলে তা বর্তমান সরকারের জন্য অবশ্যই অশনি সংকেত।’

এমএএস/এমএমজেড/আরআইপি