রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর, রামকান্তপুর, দাদশী ও সুলতানপুর ইউনিয়নসহ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে চলমান অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকল্পে যে সংখ্যক শ্রমিক নেয়ার কথা তার থেকে কম নেয়া হচ্ছে এমনকি পারিশ্রমিকও কম দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ইজিপিপির অর্থায়নে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ২হাজার ৩৯৯ দরিদ্র নারী-পুরুষ এ কাজ করেন। ৪০ দিনের এ কর্মসূচির কাজটি শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল এবং শেষ হবে ৯ জুন। যার জন্য সদর উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রতিজন শ্রমিক সকাল ৮ থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাজ করে ২০০ টাকার মধ্যে পান ১৭৫ টাকা এবং কর্মসূচির সম্পূর্ণ কাজ শেষে পাবেন বাকি ২৫ টাকা এবং দুই ধাপে পাবেন শ্রমিকরা তাদের মুজরি।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ট্যাগ অফিসার ও স্থানীয় নারী ও পুরুষ জনপ্রতিনিধিকে কাজের পিআইসি করে ওয়ার্ড ভিত্তিক দল গঠন করা হয়েছে, যাতে শ্রমিকদের সংখ্যা বিভিন্ন ধরনের। এছাড়া অনেক স্থানে প্রকল্পের বিলবোর্ড নির্দিষ্ট স্থানে না পেয়ে দেখা গেছে বাড়ি ও ইউপি কার্যালয়ে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের ওয়ার্ড পর্যায়ে যে পরিমাণ শ্রমিক থাকার কথা কোথাও কোথাও সে সংখ্যা অর্ধেক বা তার চেয়ে কম। এমনকি শ্রমিকদের টাকা কম দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দফতর সূত্রে জানা গেছে, অতি দরিদ্রদের কর্মসূচিতে মিজানপুর ইউনিয়নে শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫৪ জন, দাদশীতে ১৪৬ জন, পাঁচুরিয়ায় ৯৭ জন, বরাটে ১৫৫ জন, আলীপুরে ১৬৪ জন, খানখানাপুরে ১৬৪ জন, শহীদওহাবপুরে ১৫৪ জন, বসন্তপুরে ২৫৪, রামকান্তপুরে ১৪৫ জন, বানিবহে ১৬৮ জন, মুলঘরে ১৪০ জন, সুলতানপুরে ১৭৫ জন, চন্দনীতে ১৭৬ জন ও খানগঞ্জে ১১৬ জন।
শ্রমিকরা জানান, তারা প্রথম থেকে যে কয়েকজন শ্রমিক কাজ শুরু করেছেন আজ পর্যন্ত তারাই কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে অসুস্থ ও সমস্যার কারণে দুই একজন কাজে আসে না। তাছাড়া দিনের হাজিরা অনুযায়ী তার যে পারিশ্রমিক পান তা খুবই নগন্ন।পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি জানান শ্রমিকরা।
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান তার ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে কাজ চলছে উল্লেখ করে আর কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। অপরদিকে রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বিশ্বাস জানান, অসুস্থ ও পারিবারিক সমস্যার কারণে দুই একজন শ্রমিক কাজে আসে না হয়তো, তবে সঠিক ভাবেই কাজ চলছে এবং শ্রমিকের সংখ্যা ঠিকই আছে।
সদর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কুমার প্রামানিক জানান, তারা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছেন এবং কিছু কিছু ইউনিয়নে কাজের অনিয়ম পেয়ে হিসাব করে প্রকল্পের টাকা কেটে রেখেছেন।
Advertisement
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাঈদুজ্জামান খান জানান, সদর উপজেলায় ৬৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের কাজ চলছে। প্রতিটি প্রকল্পে কোনোটায় ৩০ জন কোনটায় ৪০ জন বা তার চেয়েও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ নারী কাজ করছেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের যে মুজরি দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে শ্রমিকরা আপত্তি করেছে। তবে কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো বা মুজরি কম দেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রুবেলুর রহমান/এফএ/আরআইপি