মতামত

সড়ক যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত হবে কবে?

নওগাঁয় শহরের বাইপাস সড়কে ট্রাক্টরের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ডিগ্রির মোড় সড়কের শহর রক্ষা বাঁধের কোমাইগাড়ী মহল্লায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, শহরের আরজি-নওগাঁ দপ্তরীপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সোয়েব (২৮) ও সদর উপজেলার চকআতিথা গ্রামের রেজাউন নবীর ছেলে অনিক হোসেন (২৭)। এটা খুবই দুঃখজনক যে মড়কে প্রাণ ঝরছেই। কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এখন অত্যন্ত জরুরি। লোকজন বাইরে বেরিয়ে নিরাপদে যেন ঘরে ফিরতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক যেন নরকে পরিণত না হয়। যাত্রী নিরাপত্তায় এর কোনো বিকল্প নেই।

Advertisement

এটা সত্যি যে, সড়ক দুর্ঘটনা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, তা দেশের প্রতিদিনের দুর্ঘটনার চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছেন। একই সময়ে গড়ে আহত হয়েছেন ৪৬ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১৮৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১২৩ জন নিহত ও ৫৫৫৮ জন আহত হয়েছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান তুলে ধরার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনারোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেছে। সুপারিশগুলো হলো, সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরিভিক্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে মালিক-শ্রমিক-যাত্রী-সরকার মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ, ফিটনেসবিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন উচ্ছেদ করে মানসম্মত যানবাহনের ব্যবস্থা, চালকদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, চালকদের হাতে দৈনিক চুক্তি ভিক্তিক বাস, ট্রাক, হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য যানবাহন ইজারা দেয়া বন্ধ, দেশের সব বেহাল সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত, বিআরটিএকে শক্তিশালীকরণ, পরিবহন খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং ফুটপাত নিমার্ণ ও সংস্কারসহ ফুটপাত দখল মুক্ত করে হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত করা।

Advertisement

এটা খুবই দুঃখজনক যে, অনেক চেষ্টার পরও সড়কে নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে পারছে না সরকার। জোরালো অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন আইন ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর একচেটিয়া প্রাধান্যের কারণেই এই খাতে শৃঙ্খলা আসছে না। এছাড়া সরকার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন একাকার হয়ে গেছে। ফলে সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ করতে গেলেই বাধা আসে। এরফলে রক্ষা হচ্ছে না যাত্রীস্বার্থ। অকাতরে প্রাণ যাচ্ছে সড়কে। তাহলে নিরাপদ সড়ক কি অলীক কল্পনার বিষয় হয়েই থাকবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ। যানবাহনের উচ্চগতি, নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত সমস্যা, পরিকল্পনা ও নীতির দুর্বলতা, অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা ত্বরান্বিত করছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে না। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে পথচারী চলার উপযোগী করতে হবে। তুলে দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। রাস্তা চলাচলে আইন অমান্যের জন্য আরও কঠিন শাস্তি ও জরিমানা আদায় করতে হবে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ফলে আগে যাওয়ার প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, চালকের মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশ যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের। আমরা এ ধরনের করুণ মৃত্যু আর দেখতে চাই না। নতুন বছরে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক হোক নিরাপদ-এটাই সকলের কাম্য।

এইচআর/আরআইপি

Advertisement