দেশজুড়ে

প্রচারণার অভাবে দর্শকশূন্য দিনাজপুর জাদুঘর

দিনাজপুর অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ধারণকারী গৌরবময় প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর জাদুঘর। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এটি দর্শকশূন্য হয়ে পড়েছে। দৈনিক এখানে ৪ থেকে ৫ জন দর্শনার্থী আসেন। কোন কোন দিন তাও হয় না বলে জানান কর্মকর্তারা। প্রচারণা না থাকায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক জাদুঘরটির এ অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুরবাসী।সবচেয়ে সংগ্রহ বেশী নিয়ে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে প্রত্মতাত্ত্বিক হচ্ছে দিনাজপুর জাদুঘর। দিনাজপুরের মুন্সীপাড়ায় হেমায়েত আলী হল ও খাজা নাজিমুদ্দিন হল লাইব্রেরীকে সাথে নিয়ে ১৯৬৮ সালে এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা রাখেন। অতীতে দিনাজপুর শহর এবং আশপাশের এলাকাগুলো রাজা-মহারাজারা শাসন করত। পাশাপাশি এই অঞ্চলটিতে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। এদের মাঝে কেউ কেউ ছিলেন সাংস্কৃতিকমনা ও জনহিতৈষী। মূলত এই রাজা মহারাজাদের ব্যবহার্য আসবাবপত্র, তৈজসপত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়েই এই জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মূর্তি। জদুঘর সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার রাজা-মহারাজা ও জমিদারদের ব্যবহৃত মূল্যবান সামগ্রী ও প্রাচীন প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নির্দশন নিয়ে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে। এখানে রয়েছে মহারাজার ব্যবহৃত কার্পেট, পাথরের তৈরী চেয়ার, তরবারি, রানীর গোসলের বাথ, পিতলের হাতির মাথা, ফুলদানী, কালো পাথরের তৈরী বিষ্ণু, কৃষ্ণ, সূর্য, রাধা-কৃষ্ণ, হনুমান, শ্যামতারা, গণেশ, মনশা, দূর্গা ও জৈন মূর্তিসহ মোট ১০৫ টি মূর্তি, ৭টি ব্রোঞ্জ মূর্তি, কাঠের তৈরী মূর্তি, শিবলিঙ্গ, গৌরমূর্তি, কাঠের ঢল, চেহেলগাজী মাজার থেকে আনা পিতলের তরবারি ও বিভিন্ন আমলের মুদ্রা।আরো রয়েছে সম্রাট আকবরের সময়ের হাতের লিখা কুরআন শরীফ, তালপাতায় লিখা রামায়ান, মহাভারত, বেদ সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, ট্যাংকের চেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি পুলিশের মাথার ক্যাপ ইত্যাদি।স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই জাদুঘরে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত কাপড়, রেডিও এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তমাখা কাপড়। এছাড়াও রয়েছে আমিরুল হুদা জিন্নাহ নামক একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধকালীন লিখে যাওয়া ডায়েরি ও মানিব্যাগ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি ও নামের তালিকা। রয়েছে পোড়া মাটির অনেক নিদর্শন। কালো পাথরের উপর বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় লিখা বেশকিছু শিলালিপি। ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে দিনাজপুর জাদুঘরে। পাশাপাশি হেমায়েত আলী ও খাজা নাজিমুদ্দিন লাইব্রেরীতে শিক্ষার্থীসহ সুধীজনদের পড়ার জন্য রয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিভিন্ন ধরনের বই।উত্তরাঞ্চলের মধ্যে দিনাজপুর জাদুঘর অন্যতম। তবে এর প্রচার ও প্রচারণা না থাকায় এলাকার বাইরে তো দুরের কথা শহরবাসী এ যাদুঘর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এর অস্তিত্ব অজানা। জাদুঘর দেখাশোনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন একজন অফিস সহকারী। এখানে মোট ৪ জন স্টাফ আছেন। জিম্মাদারের পদ শূন্য। গাইড মোঃ শওকত আলী বলেন, তারা যতটুক পারেন জাদুঘরের প্রচারণা করেন। তবে বরাদ্দ না থাকায় যাদুঘর নিয়ে কোন লিফলেট তাদের নেই। রয়েছে প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া সাহেবের লিখা দিনাজপুর মিউজিয়াম নামে একটি বই। যা ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায়। এখানে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা নেই।মিউজিয়ামের কিউরেটর ও লাইব্রেরিয়ান আবুল কালাম আজাদের কাছে তালিকা দেখতে চাওয়া হলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন দিনাজপুরের এত সুন্দর পরিবেশে এই প্রতিষ্ঠানটি তিনটি রয়েছে অথচ দিনাজপুরের শিক্ষার্থীরা তো নয়ই স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এখানে আসেন না। আমাদের কি বা করার আছে। প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ জন দর্শনার্থী এখানে আসেন। মিউজিয়ামের হলরূম ভাড়া, দোকান ভাড়া ও মিউজিয়ামের নামে থাকা ৫ লক্ষ টাকার এফডিআর এর লভ্যাংশ দিয়ে মিউজিয়াম চলছে। দিনাজপুরবাসীর অভিযোগ জাদুঘরটি সম্পর্কে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা না থাকায় নতুন প্রজন্ম এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। সঙ্গে রয়েছে ব্যবস্থাপনারও অভাব। এ কারণে সরকারের সম্ভাবনাময় এ খাতটি থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে। জাদুঘরে প্রবেশ সর্ম্পূণ ফ্রি। গ্রীষ্মকালীন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ও শীতকালীন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার বন্ধ।এমদাদুল হক মিলন/এআরএস

Advertisement