খেলাধুলা

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে পাঁচ দল

পানামা এবং সৌদি আরব এবার রাশিয়ায় যাচ্ছে র‍্যাংকিংয়ের ৫৫ তম এবং ৬৭ তম দল হিসেবে। আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়ার মাধ্যমেই নিজেদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছে তারা। এখন বিশ্বকাপে তারা যা পাবে তাই তাদের বোনাস হিসেবে অর্জিত হবে। অন্যদিকে স্বাগতিক রাশিয়াও সৌদি আরবের চেয়ে মাত্র এক ধাপ উপরে অবস্থান করছে যা তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে স্বাগতিক দল হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

এবারের পানামা, সৌদি আরব কিংবা রাশিয়ার মতো বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন অনেক বাজে দলই খেলে গিয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে পাঁচ দলকে।

জায়ার, ১৯৭৪আফ্রিকার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলো জায়ার। কঠিন বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরে বিশ্বকাপে জায়গা পেলেও বিশ্বকাপে তেমন সুবিধা করতে পারেনি আফ্রিকার এ দেশটি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয় তারা। এরপরই শুরু হয় লজ্জার গল্প। সন্দেহজনক এক কারণে তাদের খেলোয়াড়েরা পরবর্তী ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে সবাই মাঠে নামলেও ২০ মিনিটের মাথায়ই দলটির গোলরক্ষককে পরিবর্তন করিয়ে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির বদলি গোলরক্ষককে নামানো হয়। ম্যাচটি যুগোস্লাভিয়া জিতে নেয় ৯-০ গোলের ব্যবধানে। আর এরপর জায়ারের সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে ঘোষণা দেয় পরবর্তী ম্যাচে জাইরে যদি ৪ গোল কিংবা এর বেশি ব্যবধানে ম্যাচ হারে তাহলে তাদের দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে ব্রাজিলের সাথে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হেরে অবশেষে শাস্তি থেকে রক্ষা পায় জায়ারের খেলোয়াড়েরা। সেই থেকে বিশ্বকাপের এক অদ্ভূত মূহুর্ত হয়ে আছে জায়ারের বিশ্বকাপ অভিযান।

নিউজিল্যান্ড, ১৯৮২স্পেনে হওয়া ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বীতার পর নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিলো তাসমানিয়া অঞ্চলের এই দেশটি। বাছাইপর্বের ১৫টি ম্যাচের ৯টিই জিতে ভালো কিছুর আশা নিয়েই স্পেনে পা রেখেছিলো কিউইরা। তবে তাদের স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটে সেখানেই। বিশ্বকাপে তারা গ্রুপপর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ব্রাজিল, স্কটল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে। প্রথম ম্যাচেই তারা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। পরবর্তী ম্যাচে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ৩-০ এবং শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে। বিশ্বকাপ খেলতে তাদের এরপর অপেক্ষা করতে হয়েছিলো ২০১০ সাল পর্যন্ত।

Advertisement

এল সালভেদর, ১৯৮২ ১৯৭০ সালের পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা এল সালভেদর লজ্জার শিকার হয় ১৯৮২ বিশ্বকাপে। নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচেই হাঙ্গেরীর বিপক্ষে ১০-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপের রেকর্ড বুকে নাম লেখায় এল সালভেদর। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে এল সালভেদরকে নিয়ে গোল উৎসবে মেতে ওঠে হাঙ্গেরিয়ানরা। নিজেদের বাকি দুটি ম্যাচেও পয়েন্ট অর্জনে ব্যর্থ হয় এল সাভাদর। বেলজিয়ামের কাছে ১-০ এবং আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে হেরে দেশে ফেরার টিকিট কাটে তারা।

সৌদি আরব, ২০০২মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের জন্য বিশ্বকাপ খেলতে পারাটাই অনেক বড় অর্জন। ২০০২ বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম কিছু ছিলো না। তবে এ বিশ্বকাপে তারা সুযোগ পেয়েছিলো টানা তৃতীয়বারের মতো। তাই সেবার দলটিকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধে দলটির সমর্থকেরা। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি দিয়ে তাদের উদ্বোধনী ম্যাচেই তাদেরকে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারায় জার্মানি। সেখানেই সৌদি আরবের সমর্থকদের সব আশা চূর্ণ হয়ে যায়। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচ দুটিতেও পয়েন্ট অর্জনে ব্যর্থ হয় সৌদি আরব। স্যামুয়েল এতোর ক্যামেরুনের কাছে ১-০ এবং আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলে হেরে হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে সৌদি আরব।

উত্তর কোরিয়া, ২০১০উত্তর কোরিয়া যখন দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হলো তখন তাদের র‍্যাংকিং এ অবস্থান ছিলো ১০৫ নম্বরে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই এতো বেশি র‍্যাংকিং নিয়ে অংশ নেয়ার ঘটনা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-১ গোলের প্রতিদ্বিন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ হারে এশিয়ার এ দেশটি। কিন্তু তারপরই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো বিশাল এক ধাক্কা। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারে উত্তর কোরিয়ানরা। নিজেদের শেষ ম্যাচেও প্রতিরোধ গড়তে পারেনি তারা। আইভোরি কোস্টের কাছে ৩-০ গোলে হেরে লজ্জাজনক এক বিশ্বকাপ শেষ করে এশিয়ার এ দেশটি।

ডিকেটি/আরআর/পিআর

Advertisement