খেলাধুলা

বিদায়বেলায় যা বললেন ডি ভিলিয়ার্স

সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এরপর চলতি আইপিএল শেষ করে দেশে ফিরেই আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত নেন ‘মি. ৩৬০ ডিগ্রী’ খ্যাত এই ক্রিকেটার।

Advertisement

ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে কখনোই চিন্তা ছিলো না ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম লেখানোর পর থেকেই নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ডি ভিলিয়ার্স। সহজেই খেলে যেতে পারতেন আরও ৩-৪ বছর। অন্ততপক্ষে ২০১৯ সালে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ না খেলার কোন কারণ ছিল না তার। অথচ সেই তিনিই কিনা হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট থেকেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।

অবসরের কারণ হিসেবে মানসিক অবসাদ এবং শারীরিক ক্লান্তির কথা উল্লেখ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক। অবসরের ঘোষণা দেয়া ভিডিও বার্তায় ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘আমি জরুরী ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১৪টি টেস্ট ম্যাচ, ২২৮টি ওয়ানডে এবং ৭৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পর এখন সময় এসেছে সরে দাঁড়ানোর। এখন আমার জায়গায় অন্য কেউ দক্ষিণ আফ্রিকান দলে খেলুক। আমার দায়িত্ব আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। সত্যি বলতে আমি অনেক বেশি ক্লান্ত।’

অবসর নেয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না বলে উল্লেখ করেন ডি ভিলিয়ার্স। তবে লম্বা সময় ধরে সবকিছুর ব্যাপারে চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই তারকা। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই কঠিন একটি সিদ্ধান্ত। আমি দীর্ঘ সময় ধরে চিন্তা করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর খেলবো না। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে নেবো। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত ২টি সিরিজ জেতার পরে এটিই আমার সঠিক সময় মনে হয়েছে।’

Advertisement

শারীরিক ক্লান্তি কমাতে যেকোন এক বা দুই ফরম্যাটে সহসাই খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে বেছে বেছে খেলার পক্ষপাতী নন ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। তিনি বলেন, ‘আমার মতে ফরম্যাটভিত্তিক বেছে বেছে খেলাটা ঠিক হতো না। সোনালি সবুজ জার্সি গায়ে হয়তো সবকিছু খেলবো, নয়তো কোন কিছুই নয়। আমি সবসময় আমার কোচ, টিম ম্যানেজম্যান্ট এবং আমার সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সমর্থন ছাড়া এতোদিন খেলতে পারতাম না।’

বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে জাতীয় দল বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগে খেলে বেড়ানোর নজির খুব কম নয়। তবে সেসব খেলোয়াড়দের তালিকায় নাম লেখানোর ইচ্ছে নেই ডি ভিলিয়ার্সের। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে টাকা কামানো নয়, বরং শরীরের জীবনীশক্তি কমে যাওয়াতেই মূলত অবসরের সিদ্ধান্ত বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন নয় যে অন্য কোথাও খেলে আমি অনেক টাকা উপার্জন করতে যাচ্ছি। আমার মধ্যে খেলা চালিয়ে নেয়ার মতো শক্তি নেই আর। সবকিছুরই সমাপ্তি আসে। আমার মতে এটাই সেরা সময় খেলা থামানোর। খেলা ছাড়লেও আমি ফাফ ডু প্লেসি এবং তার দলের এক নম্বর সমর্থক হয়েই থাকবো। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সারা বিশ্বের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আমাকে সমর্থন দেয়ার জন্যে।’

২০০৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে, ২০০৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে এবং ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ডি ভিলিয়ার্সের। অবসর নেয়ার আগে ১১৪টি টেস্ট ম্যাচে ৮৭৬৫, ২২৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ৯৫৭৭ এবং ৭৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৬৭২ রান করেছেন তিনি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৭টি সেঞ্চুরি বেরিয়েছে তার ব্যাট থেকে।

Advertisement

এসএএস/জেআইএম