রাজধানীর ধানমন্ডিতে দাওয়াত-ই-মেজবান রেস্টুরেন্টের ময়লার ঝুড়ি থেকে শিল্প কারখানার কাপড়ে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রংয়ের কৌটা উদ্ধার করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাবের অভিযানের সংবাদ পেয়ে রংয়ের কৌটাটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলেছিল রেস্টুরেন্টের লোকজন।
Advertisement
বুধবার দুপুরে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ সময় দাওয়াত-ই-মেজবানকে জরিমানা করা হয় ৪ লাখ টাকা।
সরেজমিনে ধানমন্ডির ৭৪/৫/এ নম্বর চতুর্থ তলায় চট্টগ্রামের মেজবান ও কালাভুনার জন্য বিখ্যাত দাওয়াত-ই-মেকজবান’র রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি বড় পলিথিনে গতকালের গ্রাহকদের খাবারের উদ্ধৃতাংশ (ঝুটা খাবার) রাখা হয়েছে। বাসী এই খাবার থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। দুইটি ডিপ ফ্রিজ ছিল। প্রথম ফ্রিজটির ভেতর কয়েকদিন আগের রান্না করা জমাট গরুর মাংস, মাছের ও মুরগীর ফ্রাই রাখা।
রেডিফুট ডিপ ফ্রিজে কেন? ম্যাজিস্ট্রেটের এমন প্রশ্নে রেস্টুরেন্টের ইনচার্জ মো. ইমন উত্তর দেন, ‘ইফতারের সময় সবকিছু একসঙ্গে রেডি করা যায় না, তাই আগে থেকে তৈরি করা।’
Advertisement
ভ্রাম্যমাণ আদালত বলছে, বাসী খাবারগুলো ইফতারে গ্রাহকদের পরিবেশনের জন্য রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ডিপ ফ্রিজটি খুলে কাঁচা মাংসসহ দীর্ঘদিনের পুরনো ছোট চিংড়ি মাছের ভর্তা পাওয়া গেছে। কাঁচা অবস্থায় ভর্তা করা চিংড়িগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।
তবে দাওয়াত-ই-মেজবানের সবচেয়ে বড় অপরাধ পাওয়া যায় অভিযানের শেষ অংশে। তাদের ডাইন-ইন রুমের ময়লার ঝুড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় কাপড়ের একটি ক্ষতিকারক রংয়ের কৌটা।
অভিযান সম্পর্কে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, গ্রাহকদের থেকে খাবারের জন্য মোটা অংকের টাকা নিলেও রেস্টুরেন্টটি মানসম্মত খাবার পরিবেশন করছে না। রেস্টুরেন্টের ফ্রিজের ওপরের অংশে জং ধরা। দীর্ঘদিন ধরে এটি পরিষ্কার করা হয়নি। ফ্রিজের পাশ থেকে এক জোড়া জুতা পাওয়া গেছে, যা এখানে থাকার কথা না। ফ্রিজ থেকে রান্না করা বাসী মাছ-মাংস পাওয়া গেছে। তাদের কেনা কোয়েলের ডিমগুলো পচে গন্ধ বের হচ্ছিল।
‘অভিযানে কাপড়ের ক্ষতিকারক রং ভর্তি একটি কৌটা উদ্ধার করা হয়েছে। এই রং দিয়ে তারা জর্দা তৈরি করতো বলে জানিয়েছে। অথচ এতে স্পষ্ট করে লেখা আছে -ইন্ডাস্ট্রিয়ালের মেটেরিয়াল (শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল)। জর্দায় ব্যবহৃত ফুড গ্রেডেড রং প্রতি কেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর কাপড়ের এই রং মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০। এই রং মানবদেহে গেলে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার হওয়ার কারণ হতে পারে। তারা এই রং ব্যবহার করে মানুষের স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি করছে তা টাকায় পরিমাপযোগ্য নয়। তবুও তাদের ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে-’, বলেন ম্যাজিস্ট্রেট ।
Advertisement
দাওয়াত-ই-মেজবানের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাওয়াত-ই-মেজবানের ইনচার্জ মো. ইমন বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে জর্দার কোনো আইটেম নেই। যখন জর্দা ছিল তখন এই রং ব্যবহার করা হতো। এই রং শেফ (বাবুর্চি) ব্যবহার করতো। এটা যে ক্ষতিকর তা আমাদের জানা ছিল না।’
এদিকে বাসী জিলাপি, আলুর চপ ও হালিমে ব্যবহৃত বেরেস্তা রাখার অভিযোগে ঝিগাতলার ইউনাইটেড ক্যাটারিংকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে এ অভিযান চলে চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। অভিযানের শুরুতে রান্নায় অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করায় রাজধানীর ধানমন্ডির কেএফসি রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এআর/জেডএ/জেআইএম