কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স গ্রহণ না করেই চলছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকম। নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু পাঁচ মাসেও তা গ্রহণ করেনি গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
এদিকে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স নেয়ার ব্যর্থতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় থাকলেও তা এখনও নেয়নি অধিদফতর।
তবে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স নিতে হবে, তা আগে জানা ছিল না।
এছাড়া ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধির আরও ১২টি লঙ্ঘন দেখতে পান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।
Advertisement
লঙ্ঘিত আরও ১২ বিধি হলো
১. প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়োগবিধি থাকলেও তা মহাপরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
২. আইনের বিধান মোতাবেক শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি।
৩. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়নি।
Advertisement
৪. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের জন্য সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি।
৫. প্রতিষ্ঠানে বিধি মোতাবেক পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৬. নির্ধারিত ফরম-৩৪ ছক অনুযায়ী শ্রমিক/কর্মচারীদের দৈনিক হাজিরা ও অধিকাল কাজের রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৭. নির্ধারিত ফরম-৩৭ ছক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে কর্মচারীদের কাজের সময়সূচির নোটিশ পরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
৮. শ্রমিক/কর্মচারীদের আইনের বিধান অনুযায়ী ছুটি নগদায়নের সুবিধা প্রদান করা হয়নি।
৯. বিধি অনুযায়ী কর্মচারীগণকে মজুরিসহ প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন বাৎসরিক ছুটি প্রদান করা হয় না।
১০. বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ফরম-৯ ছক অনুযায়ী ছুটির রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।
১১. অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং নিট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ দুটি তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন-২০০৬ অনুযায়ী গঠিত তহবিলে নির্দিষ্ট হারে (৮:১০:১০) জমা প্রদান করা হয় না।
১২. কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন প্রদান করা হলেও অফিস আদেশের মাধ্যমে শুধুমাত্র সার্ভিস বিভাগে যারা কর্মরত আছেন, তাদের সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন করা হয়েছে।
বিধিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, নুরজাহান বেগম, শাহজাহান, পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম ও সিনিয়র ম্যানেজার অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচ আর ফারজানা রফিকে নোটিশ দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পুরানা পল্টন কার্যালয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক (সাধারণ) আবুল হাজ্জাত সোহাগ।
নোটিশে বলা হয়, আপনাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে ১৩টি বিধির লঙ্ঘন দেখা যায়। লঙ্ঘনসমূহ নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করে দফতরকে অবহিত করার জন্য বলা হলো। ব্যর্থতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব সামছুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিদর্শনকালে দেখা যায়, শ্রম বিধিমালার ১৩টি বিধি লঙ্ঘন করেছে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম। এত বড় প্রতিষ্ঠানের এত লঙ্ঘন মানা যায় না। বিধি লঙ্ঘনের জন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স গ্রহণের জন্য তারা ইতোমধ্যে একটি আবেদন করেছে। তা যাচাই-বাছাই চলছে।’
গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘কলকারখানা জন্য আগে এ আইনটা ছিল; এখন এ আইনে প্রতিষ্ঠান যোগ করা হয়েছে। আইনের বিষয় আমাদের আগে জানা ছিল না। আমরা এখন রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। অন্যান্য লঙ্ঘনের বিষয়েও আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির আইনে লভ্যাংশ প্রদানের ব্যবস্থা নেই। লভ্যাংশের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা অনুমোদনের জন্য মহাপরিদর্শকের কার্যালয় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিটি কর্মী স্থায়ী কর্মী হিসেবে বিবেচিত এবং সেই সুবিধা পেয়ে আসছেন।’
জেএ/এসআর/এমএআর/এমএস/আরআইপি