দেশজুড়ে

শাহী মসজিদের ইফতারে ধনী-গরিব এক কাতারে

সারি সারি প্লেটে রাখা রকমারি ইফতারি সামনে নিয়ে বসে আছেন ধর্মপ্রাণ রোজাদারেরা। মসজিদের খোলা বারান্দায় চারটি সারিতে অন্তত দেড় হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতারে বসেছেন। ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই পাশাপাশি বসে আছেন। ইফতারের আগ মুহূর্তে পুরো মসজিদে বিরাজ করে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ।

Advertisement

দৃশ্যটি মঙ্গলবার (২২ মে) সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের। এটি শুধু একদিনের নয়। সারা রমজান মাসে ইফতারের প্রতিদিনের চিত্র এটি। এখানে ইফতারে থাকে না কোনো শ্রেণি-পেশার ভেদাভেদ।

রমজান মাসের প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজারও মানুষ আসেন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের ইফতারে অংশ নিতে। এ অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করেন ভেদাভেদহীন এ ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তায়ালার বরকত লাভ করা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষের পাশেই ভিক্ষুক, রিকশাওয়ালা, হকারসহ নানা বয়সীরা শরীক হয়েছেন এ ব্যতিক্রমী ইফতার আয়োজনে। মসজিদের বারান্দায় সারি করে বসে আছেন তারা। হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে সমবেত হয়েছেন ইফতার করতে। কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো উঁচু নিচু। সবাই সমান হয়ে গেছেন ইফতারের মজলিসে। বসে আছেন মসজিদের মেঝেতে।

Advertisement

মসজিদের মিম্বার থেকে ইসলামী মাসয়ালা-মাসায়েল বর্ণনা করা হচ্ছে। মেঝেতে বসে তা শুনছেন ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা। ইফতারের আগে মোনাজাত হয়। কিছু সময় পর মাইকে সাইরেন বেজে ওঠে। একসঙ্গে ইফতার করেন প্রায় দেড় হাজার রোজাদার।

ইফতার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, খেঁজুর, শরবত, জিলাপি, আলুর চপ, ছমুছা, অন্থন, পেঁয়াজু ইত্যাদি। ইফতার বণ্টন করেন মসজিদের কয়েকজন কর্মচারী ও সেচ্ছাসেবীরা।

মো. আসাদুর রাহমান নামে ষাটোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তার বাসা নগরের লাভলেনে। গত তিন বছরের প্রায় প্রতিটি রোজাতেই তিনি শাহী মসজিদে ইফতার করেন।

তিনি বলেন, ‘রমজানে সমাজের অবহেলিত লোকগুলোর সঙ্গে একত্রে ইফতার করার জন্য আসি। প্রতিদিন বাসা থেকে হাতে করে কিছু ইফতারও নিয়ে আসি। সবার সঙ্গে মিলে এখানে ইফতার করি। এখানে ধনী গরিবের কোনো পার্থক্য থাকে না। ধনী-গরিব, বড়-ছোট সবিাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রমজানের স্প্রিটটা বুঝতে হলে এর বিকল্প নেই।’

Advertisement

চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র মহিবুল করিম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এই ইফতারে যোগ দিলাম। কয়েক বছর ধরেই এই মসজিদের ইফতারের কথা শুনে আসছিলাম। আজই প্রথম এলাম। অন্য ধরনের এক ভাললাগার অনুভূতি হচ্ছে।’

নগরের টেরিবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী চন্দনাইশের মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে অনেক মুসল্লি একসঙ্গে ইফতার করেন, সেটা অন্যরকম একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করে। ইফতারের আগে ইসলামী মাসয়ালা–মাসায়েল বর্ণনা করা হয় এটা রোজাদারদের জন্য খুব উপকারী। ইচ্ছে থাকলেও প্রতিদিন আসতে পারি না, তাই সপ্তাহে দুয়েক দিন চলে আসি।’

মসজিদের খতিবের এক সহকারী জানান, প্রতিবছর রমজান মাসের শুরু থেকেই এখানে ইফতারের বিশাল আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা থাকে। ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে শাহী জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদ।

সূত্র জানায়, মসজিদের খতিব আওলাদে রাসুল সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল মাদানির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ১৮ বছর ধরে চলে আসছে এ ইফতার আয়োজন। ১৯৯৬ সালের দিকে প্রথম মক্কা-মদিনার আদলে এ ধরনের ইফতারের রেওয়াজ চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে চালু হয় ভিন্নধর্মী এ ইফতার।

এমএমজেড/এমএস