‘জীবনে বহু রোগীর চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছি, আবার বহু রোগীর মৃত্যুও দেখেছি। কিন্তু মুক্তামণির মৃত্যু আমার জন্য হার্ট ব্রেকিং খবর। ছোট্ট এ শিশুটির ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না’।
Advertisement
আজ (বুধবার) সকালে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তামণির মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এসব বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই মুক্তামণির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকায় নিয়ে আসতে বলে আসছিলাম। গতকালও সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে দুজন চিকিৎসককে তাদের বাড়িতে পাঠাই। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসকরা জানায়, মুক্তামণির শারিরিক অবস্থা খুবই খারাপ। হাতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মারাত্নক (হিমোগ্লোবিনের অভাব) রক্তশূন্যতায় ভুগছে।
তখন মুক্তামণির বাবাকে বলি, ঢাকায় না হউক অন্তত সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তার বাবা রাজি হয়নি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন- ‘স্যার, অনেক তো চেষ্টা করেছেন। ভাগ্যে খারাপ- ভালো হয় নাই। এখন মেয়েটা অনেক কষ্ট পাইতাছে। আর টানাহেঁচড়া করতে চাই না। আল্লাহর হাতে ছাইড়া দিছি। মরলে বাড়িতেই মরুক।’ আর আজ সকালেই তার মৃত্যু সংবাদ শুনতে হলো।
Advertisement
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তামণিকে রিলিজ নিয়ে বাড়িতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার তাকে ঢাকায় আসতে বলা হলেও মুক্তামণি রাজি হয়নি। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
মুক্তামণির হাত আগের থেকে কয়েক গুণ ফুলে যায়। ব্যান্ডেজ খুলে পরিষ্কার করার সময় হাত থেকে বেরিয়ে আসছে বড় বড় পোকা।এর আগে ঢামেক ভর্তি করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণির হাত দেখে আঁতকে ওঠেন। একইসঙ্গে হাত অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা দেশেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
অবশেষে দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা সেবার পর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসে মুক্তামণি। তবে পরবর্তীতে মুক্তামণি আর ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। একইসঙ্গে মুক্তামণির অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে তার পরিবারও।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইব্রাহিম গাজি ও আসমা দম্পত্তির ঘরে দুটি যমজ সন্তান জম্মগ্রহণ করে। আদর করে নাম রাখা হয় হীরামণি ও মুক্তামণি। এছাড়া তাদের দু’বছরের আল-আমিন নামের একটি ছেলে রয়েছে। দেড় বছর বয়সে মুক্তামণির ডান হাতের কবজি ফুলতে শুরু করে। এরপর সাতক্ষীরা ও খুলনার অনেক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কেনো ফল পাওয়া যায়নি।
Advertisement
মুক্তামণি স্থানীয় মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বড় মেয়ে হীরামণি ওই একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
ঢাকা থেকে আসার পর মুক্তামণির দেখভাল ওর মা আসমাই করতেন। প্রতিদিনের ড্রেসিং, খাওয়ানো সবকিছু করতেন তিনি।
আজ সকালে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মুক্তামণি।
এমইউ/এমবিআর/এমএস