আন্তর্জাতিক

বিএনপিকে আবারো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলছে কানাডার আদালত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’কে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আগের দেয়া এক রায় বহাল রেখেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট। দেশটিতে বিএনপির এক কর্মী ২০১৫ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে শুনানি শেষে বিএনপিকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও সরকার উৎখাতের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর তার সেই আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়।

Advertisement

পরে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন বিএনপির ওই কর্মী। রিভিউ আবেদনের শুনানি গত ৪ মে অন্টারিওর ফেডারেল আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে ‘বিএনপিকে সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে আদালতের দেয়া আগের রায় বহাল রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সোমবার কানাডার ফেডারেল কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়।

কানাডায় বিএনপির যে কর্মী ২০১৫ সালে আশ্রয় প্রার্থীর আবেদন করেছিলেন তার নাম মো. মোস্তফা কামাল (৩১)। সেই সময় কানাডার সরকার অাদালতকে জানায়, মোস্তফা কামাল বিএনপির কর্মী হিসেবে কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু তার এ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তার আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়।

আদালত জানান, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট ভিত্তি আছে যে, মো. মোস্তফা কামাল এমন একটি সংগঠনের সদস্য যে সংগঠনটি দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং বাংলাদেশ সরকারকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের শক্তিগুলোকে উসকানি দেয়ার সঙ্গে জড়িত।

Advertisement

পরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির এই কর্মী ফেডারেল কোর্টে তার আবেদন বাতিলের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন। তবে তার এই রিভিউ আবেদনও বাতিল করে দিয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট।

কানাডার আদালত দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতিবিষয়ক মন্ত্রীর সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে ওই রায় বহাল রেখেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে আবেদনকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির একজন সদস্য।

তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাত তৎপরতা অথবা উৎখাতে প্ররোচনা দেয়ার সঙ্গে জড়িত। যা কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী সুরক্ষা অাইনের এসসি-২০০১ এর সি-২৭ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কানাডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি অ্যাজেন্সির (সিবিএসএ) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি এ দাবি করেন।

বিএনপির ওই কর্মীর রিভিউ আবেদনের পর ফেডারেল কোর্ট দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতিবিষয়ক মন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দেন। কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের অভিবাসন বিভাগ এবিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর আদালতে তুলে ধরে। পরে সিবিএসএ’র প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও পুনর্বিবেচনা করে আগের দেয়া রায় যৌক্তিক বলে জানান ফেডারেল কোর্ট।

Advertisement

ফেডারেল কোর্ট আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে দেয়ার পর ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন মোস্তফা কামাল। তিনি এবার বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের কর্মী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা পাওয়ার আবেদন করেন এবং এ আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আদালতের কাছে বিএনপির এই কর্মী বলেন, বিএনপি এবং যুবদল সম্পূর্ণ পৃথক দুটি রাজনৈতিক দল। তখন তার এই আবেদনের জন্য নতুন করে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত।

এ সময় কুমিল্লার বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবদল নেতার বক্তব্য রেকর্ড করে তা আদালতের কাছে উপস্থান করেন কামাল। ২০০৫-০৬ সালে তিনি যুবদলের কুমিল্লা জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ছিলেন বলে দাবি করেন।

মোস্তফা কামালের এই দাবির পর আইডি তখন বাংলাদেশি এক মার্কিন অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়। তার দেয়া তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে আইডি। বাংলাদেশি ওই অধ্যাপক বলেন, বিএনপি থেকে পৃথক একটি সংগঠন যুবদল। তবে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের আদলে সংগঠনটির পৃথক নির্বাহী কমিটি রয়েছে। তবে দুটি সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।

পড়াশোনা শেষ হলে ছাত্রদল থেকে কর্মীরা যুবদলে যোগ দেন। পরে সেখান থেকে বিএনপিতে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির পদমর্যাদা এবং দায়-দায়িত্বের অনুরূপ রয়েছে যুবদলের নির্বাহী কমিটিতে। পরে শুনানিতে যুবদলকে বিএনপির অঙ্গসংগঠন নয় বলে মোস্তফা যে দাবি করেছিলেন; সেই দাবির পক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।

এসআইএস/জেআইএম