খেলাধুলা

১৯৭০ : পেলের শেষ বিশ্বকাপ

১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছরের তরুণ পেলের পায়ের ক্যারিশমায় ব্রাজিল জিতেছিল প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা; কিন্তু ১৯৬২ আর ১৯৬৬ বিশ্বকাপে সেই পেলে নিজের নামের প্রতি সুবিচারই করতে পারেননি। মাঠে এত বেশি হার্ড ট্যাকলের শিকার হয়েছেন যে, এক সময় ফুটবলই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ব্রাজিলের কালো মানিক; কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কর্মকর্তাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত মেক্সিকো গেলেন পেলে এবং খেললেন জীবনের শেষ বিশ্বকাপ। শুধু তাই নয়, তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপাও এনে দিলেন তিনি ব্রাজিলকে। তিনটি শিরোপা জয়ের কারণে ১৯৭০ সালেই জুলেরিমে ট্রফির চিরস্থায়ীভাবে মালিক হয়ে যায় পেলের দেশ।

Advertisement

১৯৭০ সালের নবম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, উরুগুয়ে, স্পেন অংশই নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। সে বিশ্বকাপেই ব্রাজিল পেয়েছিল ইতিহাসের সেরা একটি দল। পেলে, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা, ক্লোদোয়ালদো (ডোডো), গার্সন, জোয়ারজিনহো, রিভেলিনো এবং তোস্তাওদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল ব্রাজিল দল।

যে দলটিকে এখনও ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম একটি সেরা দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে। বাছাই পর্বের ৬টি এবং বিশ্বকাপের ফাইনালসহ ৬টি, মোট ১২টি ম্যাচ টানা জিতে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিল ব্রাজিল। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে জুলে রিমে ট্রফিটি চিরদিনের নিয়ে নেয় ব্রাজিল।

১৯৬২ আর ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ছন্দময় ফুটবলের পরিবর্তে শারীরিক শক্তির ব্যবহারই হয়েছিল বেশি। ১৯৬২ বিশ্বকাপে তো শারীরিক শক্তি প্রদর্শণের কারণেই পেলেকে এক ম্যাচ খেলে চলে যেতে হয়েছিল মাঠের বাইরে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপেও প্রতিপক্ষের তুমুল মারের কারণে খেলতে পারেননি পেলে।

Advertisement

এই দুই বিশ্বকাপের পর আবার ১৯৭০ থেকে ব্রাজিলীয় ছন্দ ফিরে এলো। পেলের হাত ধরে শিরোপা আবারও গেল লাতিন আমেরিকায়, ব্রাজিলে। বিশ্বকাপের আগে কলম্বিয়ায় প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ববি মুর একটি স্বর্ণের নেকলেস চুরির দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরে যদিও ছাড়া পান, তারপরও বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একটি দলে পরিণত হয় ওই ঘটনার কারণে।

ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার পর এবারই প্রথম উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম আফ্রিকা থেকে খেলতে এলো মরক্কো। রঙিন বিশ্বকাপ পরিচিতিও এলো ১৯৭০ বিশ্বকাপ থেকেই।

ফিফা কর্তৃক অফিসিয়াল বল তৈরির দায়িত্ব এবার থেকেই পায় ক্রীড়া সরঞ্জাম নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। এ বিশ্বকাপ থেকেই নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় দলের জন্য প্লে-অফ আর গোল গড়ের নিয়ম না রেখে গোলপার্থক্যের নিয়ম প্রবর্তন করা হয়। আবার অতিরিক্ত সময়েও যদি জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হয়, তাহলে প্লে-অফ না খেলে রেফারি টসের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন কে হারবে, কে জিতবে।

১৬টি অংশগ্রহণকারী দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে প্রথমে লিগ ও পরে নকআউট পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। পেলের গোলেই বিশ্বকাপে জয়যাত্রা শুরু করে ব্রাজিল। কোয়ার্টারে প্রথমবারের মতো উঠে আসা পেরু ব্রাজিলের কাছে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নেয়। সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে ব্রাজিল।

Advertisement

অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো খেলায় ইতালি ৪-৩ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠে আসে ফাইনালে। মেক্সিকোর এস্টাডিও আজটেকায় অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলাটি দেখতে উপস্থিত হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪১২জন দর্শক।

পেলের গোলেই ফাইনালে গোলের সূচনা করে ব্রাজিল। এরপর একে একে ৪টি গোল দেয় চ্যাম্পিয়নরা। ইতালির বোনিনসেঙ্গা একটি গোল শোধ করেন। ৪-১ গোলের ব্যবধানে জয় দিয়ে শিরোপা জিতে নেয় সেলেসাওরা। সে সঙ্গে বিশ্বকাপকে বিদায় জানিয়ে দেন কালো মানিক। জার্মানির গার্ড মুলার ১০টি গোল করেন। পেরুর তিওফিলো কিউবিলাস নির্বাচিত হন টুর্নামেন্ট সেরা ফুটবলার হিসেবে।

আইএইচএস/জেআইএম