খেলাধুলা

কেমন হবে স্পেনের বিশ্বকাপ একাদশ?

এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। স্পেনের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, জমাট রক্ষণভাগ এবং সৃজনশীল মিডফিল্ড- ইতোমধ্যেই অনেক দলের চিন্তা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

স্পেনের কোচ জুলেন লোপেতেগুই অবশেষে স্পেনের ২৩ সদস্যের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছেন। ২৩ জনকে বাছাই করার সময় মধুর সমস্যায়ই পড়তে হয়েছে তাঁকে। তাই তো রবার্তো, আলোন্সো, পেদ্রো, ফ্যাব্রিগাস, মোরাতাদের মতো বড় নামদের ঘরে রেখেই রাশিয়ায় যেতে হচ্ছে স্পেনকে। এখন এই ২৩ সদস্যের দল থেকে স্পেনের চূড়ান্ত একাদশ কেমন হতে পারে তা-ই অনুমান করার চেষ্টা করেছে স্পেনের জনপ্রিয় দৈনিক 'মার্কা'। চলুন 'মার্কা'র সেই বিশ্লেষণ দেখে আসা যাক...

নিয়মিত একাদশ : স্পেন এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে একাদশটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলিয়েছে, সেটিই থাকবে এবারের বিশ্বকাপে তাদের অনুমিত প্রথম একাদশ। আর এ একাদশে গোলবারের নিচে প্রত্যাশানুযায়ীই থাকবেন ম্যানচেস্টার ইউনাউটেড গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। রক্ষণভাগে থাকবেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস এবং বার্সেলোনা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। দুই ফুলব্যাকে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দানি কার্ভাহাল এবং জর্ডি আলবা।

এবার আসা যাক মিডফিল্ডে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডের দায়িত্বে থাকছেন সার্জিও বুস্কেটস এবং মাঠ পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন বার্সা কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মিডফিল্ডার কোকে। সেক্ষেত্রে ওয়াড মিড কিংবা উইং এ চলে যাবেন ইসকো এবং ডেভিড সিলভা। স্ট্রাইকার পজিশনে থাকবেন ডিয়াগো কস্তা। অর্থাৎ এই একাদশটি খেলবে ৪-১-৪-১ কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৩-৩ ফরমেশনে।

Advertisement

ফলস নাইন : ২০১২ ইউরোতে দেল বস্কের স্পেন ইউরো জিতেছিলো কোনো বিশেষজ্ঞ ফরোয়ার্ড না খেলিয়েই। সেবার ফলস নাইনের ভূমিকায় ছিলেন বর্তমান চেলসি তারকা সেস্ক ফ্যাব্রিগাস। লোপেতেগুইও যদি সেই পন্থা অবলম্বন করতে চান তাহলে তাঁর একাদশে রক্ষণভাগ অপরিবর্তিতই থাকবে। অর্থাৎ ডি গিয়া, রামোস, পিকে, কার্ভাহাল এবং আলবা অনুমিতভাবেই একাদশে থাকবেন। পরিবর্তন শুরু হবে মিডফিল্ড থেকে। তখন বুস্কেটস এবং কোকেকে হোকডিং মিডে দেখা যাবে এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে থাকবেন ইসকো। ইসকোর সামনেই থাকবেন ইনিয়েস্তা এবং রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ তুর্কী মার্কো অ্যাসেনসিও। আর তখন ফলস নাইনের ভূমিকায় দেখা যাবে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা ডেভিড সিলভাকে। অবশ্য সিলভা এবং অ্যাসেনসিওকে পজিশনের রদবদল করাতে পারেন কোচ লোপেতেগুই চাইলে।

ওয়াইড প্লে ( ৪-৪-২) : বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান এই ফরমেশনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্যবহার করে সাফল্য পাচ্ছেন। স্পেন কোচ লোপেতেগুই চাইলে জিদানের এই ফর্মূলা অনুসরণ করতে পারেন, কারণ জিদানের অনেক খেলোয়াড়ই লোপেতেগুইয়ের কাছে রয়েছে। এই ফরমেশন ব্যবহার করতে চাইলেও রক্ষণভাগ আগের মতো যথারীতি অপরিবর্তিত থাকবে। তখন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে থাকবেন দুই বার্সা কিংবদন্তি সার্জিও বুস্কেটস এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। আর দুই পাশে ওয়াইড মিডে চলে যাবেন দুই রিয়াল মাদ্রিদ তরুণ মার্কো অ্যাসেনসিও এবং লুকাস ভাস্কুয়েজ। অ্যাসেনসিও এবং ভাস্কুয়েজ জিদানের ফরমেশনে এ পজিশনে খেলে অভ্যস্ত। তাই তাদের সমস্যা হবার কথা নয়। আর তখন স্ট্রাইকে থাকবেন ডিয়াগো কস্তা এবং ইয়াগো আসপাস।

সৃজনশীল একাদশ : স্পেনের স্কোয়াডে এবার বিশেষত্ব যেটি সেটি হচ্ছে সৃজনশীলতা। এ সৃজনশীলতাকে ভিত্তি করে লোপেতেগুই একাদশ সাজাতে চাইলে রক্ষণভাগ পূর্বের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। পরিবর্তন আসবে যথারীতি মাঝমাঠে। তখন হোল্ডিং মিডে দেখা জাবে বুস্কেটস এবং বায়ার্ন তারকা থিয়াগো আলকান্তারাকে। সেন্ট্রাল মিডে থাকবেন ইসকো এবং তার সামনেই থাকবেন সিলভা এবং ইনিয়েস্তা। আর স্ট্রাইকে থাকবেন ইয়াগো আসপাস। অর্থাৎ ফরমেশন হবে ৪-২-৩-১।

টোটাল অ্যাটাক : যদি সম্পূর্ণ আক্রমণাত্মক একাদশ সাজাতে চান লোপেতেগুই, তাহলে তাঁকে রক্ষণভাগে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। তখন গোলরক্ষক ডি গিয়া থাকলেও সেন্টার ব্যাক থাকবেন তিনজন। তারা হলেন রামোস, পিকে এবং আজপিলিকুয়েতা। মিডফিল্ডের দায়িত্ব তখন থাকবে ইসকো, ইনিয়েস্তা, থিয়াগো এবং সিলভার ওপর। আর আক্রমণভাগে থাকবেন কস্তা, আসপাস এবং ভ্যালেন্সিয়া তারকা রদ্রিগো। তখন ফরমেশন হবে ৩-৪-৩।

Advertisement

রক্ষণাত্মক একাদশ : লোপেতেগুই রক্ষণাত্মক একাদশ সাজালে রক্ষণভাগে তাঁর দরকার পড়বে রামোস, পিকে, মনরিয়াল এবং আজপিলিকুয়েতাকে। গোলরক্ষক যথারীতি ডি গিয়াই থাকবেন। মিডফিল্ডে থাকবেন কোকে, বুস্কেটস, সাউল এবং ভাস্কুয়েজ। তাদের সামনেই থাকবেন বায়ার্ন তারকা থিয়াগো এবং আক্রমণভাগে থাকবেন থাকবেন ডিয়াগো কস্তা। তখন ফরমেশন হবে ৪-৪-১-১।

লোপেতেগুইয়ের কাছে যে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়েরা রয়েছেন, তাতে তিনি চাইলে উপরের যে কোনো একাদশই নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে বদলাতে পারেন কোনো ম্যাচ চলাকালীন অবস্থাতেই। এর মাঝে প্রতিটি একাদশই প্রতিপক্ষের মনে ভীতির সঞ্চার করতে যথেষ্ট।

ডিকেটি/এমএমআর/পিআর