চলছে গ্রীষ্মকাল। এ মৌসুমের অবিরাম বৃষ্টি ঘেরচাষি ও কৃষকদের মাঝে আনন্দ বয়ে আনলেও উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে এনে দিয়েছে ভোগান্তি। একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক লোককে আশ্রয় দিতে গিয়ে আকৃতি পরিবর্তন করা শত শত একর কাটা পাহাড়ই দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে বসবাসকারীদের কাছে। এর উপর বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় মনের মধ্যে মাটিচাপা পড়ার আতঙ্ক কাজ করছে সব সময়।
Advertisement
জানা গেছে, প্রথম রমজান থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী না হলেও ঘণ্টা দুয়েক ঝরা বৃষ্টি রোহিঙ্গা শিবিরের বেশীরভাগ জায়গায় কাদাপানি জমাচ্ছে। এসব কাদার ফলে অনেক বাসা থেকে বের হওয়াও দূরূহ হয়ে পড়েছে। অনেক সময় দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঘরের চালা। হালকা বর্ষণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও দুর্ভোগটা সামনে চরম হবে এমনটিই শঙ্কা তাদের।
সূত্রমতে, উখিয়া-টেকনাফের প্রায় দু’ডজনের বেশি রোহিঙ্গা শিবিরের ঢালু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমছে। কখনও ভারি আবার কখনও হালকা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশংকায় আছে লাখো রোহিঙ্গা। অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি। রোহিঙ্গা ব্লকগুলোর মাঝিদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করা হয়েছে টহল দল। যারা বৃষ্ট হলেই নির্ধারিত এলাকায় তদারকির দায়িত্ব পালন করার দীক্ষা নিচ্ছেন।
কুতুপালংয়ের মধুরছড়া ‘ডাবল জিরো’ ব্লকের মাঝি আবদু রহিম জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকা হলেও আসলে এখানে পাহাড়ের কোনো চিহ্ন নেই। তাই বৃষ্টিতে ক্যাম্পে বসবাসকারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। হালকা বৃষ্টিতেও কাটা মাটিতে দ্রুত কাদা হওয়ায় সবার মাঝে পাহাড় ধসের আশঙ্কা কাজ করছে। সম্প্রতি পাহাড় ধস নিয়ে মহড়া হওয়ার পর ভোগান্তি কেমন হতে পারে এটি আঁচ করে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। নিজ দেশে বন্দুকের গুলি ও দায়ের কোপ থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে মাটিচাপায় মারা যাওয়ার ভয় এখন তাড়া করছে সবাইকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নির্দেশে ব্লকের সকলকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
Advertisement
একই ব্লকের বাসিন্দা সালামত খান বলেন, বৃষ্টির চেয়ে বড় ভোগান্তি দেয় দমকা হাওয়া। বৃষ্টির আগে কালো মেঘসহ ছুটে আসা ধমকা হাওয়া অনেক বাসাবাড়ির চালা উড়ে নিয়ে যায়। এমন সময় বৃষ্টি এলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাকভেজা হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই ঝড় হলে চাল রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে সবার।
বালুখালীর সি-ব্লকের মাঝি মো. আব্দুল্লাহ জানান, মুরব্বীরা বলেন বৃষ্টি সঙ্গে বজ্রপাত পাহাড়ের মাটি নমর করতে সহায়তা করে। আর এখন প্রতিটা বর্ষণেই বিজলিসহ আকাশ গর্জন করে। গুড়ি গুড়ি বা ভারী বৃষ্টি যাই হোক বিশাল ক্যাম্পের কাঁচা রাস্তা এবং ঘরের আশপাশে কাদা হওয়ায় রোহিঙ্গাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র খাবার পানির সঙ্কট রয়েছে।
লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বশীল আব্দুল মতলব জানান, বৃষ্টি হলেই জমে থাকছে পানি। ফলে পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়ে ওঠে না।
অপরদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও বৃষ্টি-দমকা হাওয়ার তাড়নায় দুর্বিষহ দিনাতিপাত করছে। তার উপর যোগ হয়েছে মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর মাইকিং।
Advertisement
রোহিঙ্গা মাঝি দিল মোহাম্মদ বলেন, বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে প্রাণটা নিয়ে পালিয়ে এসে এখন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে সময় কাটাতে হচ্ছে। দমকা হাওয়ায় গত সপ্তাহে উড়ে গেছে কয়েকটি রোহিঙ্গা ঝুপড়ি। মনে হচ্ছে পুরো বর্ষাকালটা এভাবেই যাবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, কাল-বৈশাখী ঝড়ে আমাদের দেশের মানুষও ভোগান্তি কম পায় না। আশ্রিত হিসেবে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাই শঙ্কিত নয় সতর্ক থাকতে বার বার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।
একই কথা জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসানও। তার এলাকার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রেখে দুর্যোগ এড়াতে মাইকিং করে সতর্ক করা হয় বলে উল্লেখ করেন ইউএনও।
এফএ/পিআর