অর্থনীতি

নিরক্ষর গ্রাহকদের বায়োমেট্রিকে ব্যাংক সেবা দেয়ার নি‌র্দেশ

নিরক্ষর গ্রাহকদের সহজ ও ঝুঁকিমুক্তভাবে চেকে লেনদেন নি‌শ্চিত কর‌তে ব্যাংকগু‌লো‌কে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতি চালুর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Advertisement

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পঠিয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, নিরক্ষর গ্রাহকদের পরিচিতির সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পাদন করার পাশাপাশি নিরক্ষর গ্রাহকদের সহজেই শনাক্ত করার জন্য আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক), চোখের মনির প্রতিচ্ছবি চিহ্নিতকরণ (আইরিশ রিকগনাইজেশন) ও শরীরের বিশেষ কোনো দাগ চিহ্নিতকরণ (ফিজিক্যাল রিকগনাইজেশন) ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। যাতে এমন গ্রাহকরা সহজে ও নির্বিঘ্নে যেকোনো শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখাগুলোকে বায়োমেট্রিক তথ্যধারণ ও যাচাইয়ের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, নিরক্ষর গ্রাহককে প্রতিবার অর্থ উত্তোলনের জন্য যেকোনো শাখায় সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক তার কোনো নিকটাত্মীয় বা পরিচিতজন সঙ্গে আনতে পারেন, যিনি গ্রাহকের চেক লিখতে সহায়তা দেবেন। তবে ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণে গ্রাহক ব্যাংক শাখায় আসতে অক্ষম হলে তার অনুরোধে শাখা ব্যবস্থাপক মনোনীত ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে চেকলিখন, পঠন ও গ্রাহকের সম্মতি প্রদান নিশ্চিত করতে পারে এবং গ্রাহকের সম্মতিক্রমে তা পরিবারের কোনো সদস্যকে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উত্তোলনকারীর সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

Advertisement

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নিরক্ষর গ্রাহক যদি তার সঙ্গে কাউকে না আনেন, সেক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা তার চেক লিখে দিতে সহায়তা দেবেন। ব্যাংক কর্মকর্তা চেকে লিখিত টাকার পরিমাণ গ্রাহককে পড়ে শোনাবেন। গ্রাহক সম্মতি জানালে ব্যাংক কর্মকর্তা নগদ প্রদানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতি পরিপালন করে নগদ পরিশোধের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে পাঠাবেন।

ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তা চেক লিখে দেয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ নেয়া যেতে পারে (যা ছক আকারে ব্যাংক শাখার কাছে সংরক্ষিত থাকবে)। ওই ঘোষণাপত্রে গ্রাহকের আঙুলের ছাপের পাশাপাশি চেক লেখক ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ নাম, পদবি, আইডি এবং ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সাক্ষীর স্বাক্ষরসহ নাম, পদবি, আইডি ইত্যাদি থাকবে।

চেক লেখার প্রক্রিয়াটি শাখার এমন দৃষ্টিগোচর স্থানে সম্পাদন করতে হবে যেখানে সিসিটিভির কাভারেজ রয়েছে। এছাড়া, গ্রাহক ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনে চেকের নির্ধারিত স্থানে তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙুলির ছাপ দেবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা বৃদ্ধাঙুলির ছাপ প্রত্যয়ন করবেন এবং ব্যাংকে রক্ষিত ছবির সঙ্গে উপস্থিত গ্রাহকের চেহারা যাচাই করবেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই গ্রাহকের নিকটাত্মীয়/প্রতিনিধির মাধ্যমে চেকটি কাউন্টারে উপস্থাপন করা যাবে না। এছাড়া, নিরক্ষর গ্রাহকদের সেবা প্রদানের কার্যক্রম হেল্প ডেস্কের আওতাভুক্ত করা যেতে পারে। নিরক্ষর গ্রাহককে এটিএম কার্ড সুবিধা আপাতত না দেয়াই সমীচীন হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

নিরক্ষর গ্রাহককে সচেতন করতে ব্যাংক নিজেই উদ্যোগ নিতে পারে। এ ব্যাপারে দেশব্যাপী সাক্ষরতা অভিযানে নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিওর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

এসআই/বিএ