সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে নতুন করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযান শুরু হয়েছে। ভালো কথা। আমরা অবশ্যই চাই যে, দেশ মাদকমুক্ত হোক, আমরা অবশ্যই চাই যে, যারা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা হবে।’
Advertisement
সোমবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের ‘পুস্পদাম রেস্টুরেন্টে’ ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিশের ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। মাহফিলের শুরুতে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের ও নায়েবের আমীর মাওলানা শফিক উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ক্ষমতাসীন দলের মাদক পাচারকারী হিসেবে পরিচিতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাদক অভিযান হচ্ছে ভালো কথা। সবার আগে নিজের ঘরের মাদক পাচারকারীদের গ্রেফতার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কক্সবাজারের টেকনাফের এমপি (আবদুর রহমান বদি) তাকে তো জামিন দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মহা আনন্দে এই মাদক পাচার শুরু করেছেন। এক-দুইজন নয়, প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় তাদেরকেই আজকে আপনারা ছেড়ে দিয়েছেন যারা পাচারের সঙ্গে জড়িত।
সম্প্রতি ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ৬টি জেলায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। গোটা দেশে এই ক্রসফায়ারের নামে, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার নামে, বহু বিরোধী পক্ষকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, চৌধুরী আলমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫/৬ বছর পার হয়ে গেছে- এ রকম অসংখ্য মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারের নামে যা খুশি তাই করছেন। দেখুন কত সংকীর্ণ এরা (সরকার)। মামলাগুলো মিথ্যা। ৩৬টি মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে তাতে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল বাসে আগুন দিয়েছেন, গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন ইত্যাদি। এই মামলাগুলো যখন হাইকোর্টে জামিনের জন্য এসেছে সেখানে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বাধা প্রদান করেছে। দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট, শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়ম তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যদি আমরা এই দানবীয় শক্তিকে সরাতে না পারি তাহলে আমার দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে।
Advertisement
খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ইফতারে জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারওয়ার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির দুই অংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এমদাদুল হক চৌধুরী, শামসুদ্দিন পারভেজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শেখ মুজিবর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা মাওলানা জাফরুল্লাহ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারওয়ার, সাংবাদিক মহিউদ্দিন আলমগীর মোস্তফা কামাল মজুমদার, আবদুল হাই শিকদার, অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা বাদল, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক মোজাহিদুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সহসভাপতি বাসির জামাল ইফতারে অংশ নেন।
খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমীর মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, মুহাম্মদ মুনতাসীর আলীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ইফতারে অংশ নেন। ইফতারের আগে কারাবন্দি জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং খেলাফত মজলিশের অসুস্থ আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এদিকে অনুষ্ঠানে ইফতার সামগ্রী পরিবেশনে বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে। গুটি কয়েক মানুষ পর্যাপ্ত ইফতার সামগ্রী পেলেও অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ নিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
কেএইচ/ওআর/আরআইপি
Advertisement