দেশজুড়ে

আসামিদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে এলাকাছাড়া ৮ পরিবার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের একটি খুনের মামলায় সাক্ষী হওয়ায় তিন বছর ধরে এলাকাছাড়া রয়েছে ৮ পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়।

Advertisement

খুনের মামলার আসামিদের অত্যাচার সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে যাওয়া ৮ পরিবারের বসতভিটা এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে ওই ৮ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। একের পর এক হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাড়ি-ঘরের আসবাবপত্র খুলে নেয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ও গাছ কেটে নিয়েছে মামলার আসামিরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস বাবলু চৌধুরীর মদদে প্রভাব বিস্তার করে হত্যা মামলার আসামিরা। বাবলু চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে সাক্ষীদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর-দখলের পাশাপাশি এলাকাছাড়া করে মিজান শেক, শাহীন খন্দকার ও দুলাল কাজী গংয়েরা।

Advertisement

এদিকে, ভুক্তভোগী আট পরিবারের সদস্যরা দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী গ্রামের বকু মাতব্বরের মেয়েকে অপহরণ করে স্থানীয় একটি চক্র। এ নিয়ে বকু মাতব্বরের স্ত্রী মেহেরজান বেগম থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় আসামিদের কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এরই জের ধরে আসামিরা ২০০৪ সালে খুন করে বকু মাতব্বরকে। বকু মাতব্বরের খুনের মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন তার ভাই টুকু মাতব্বর। এ মামলায় আসামিদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ নিয়ে প্রভাবশালী মহলটি ক্ষুব্ধ হয় টুকু মাতব্বরের ওপর। ২০০৬ সালে টুকু মাতব্বরকে স্থানীয় বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয় সাতজনকে।

Advertisement

এ হত্যা মামলায় সাক্ষী হন আটজন। মামলার পর থেকে আসামিরা মামলাটি তুলে নিতে বাদীপক্ষকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কিন্তু বাদীপক্ষ মামলা তুলে না নেয়ায় বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসামিরা। টুকু মাতব্বর হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে আসামিরা।

আসামিপক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে মামলার সাক্ষী মিরান কাজী, আলম কাজী, ওহাব তালুকদার, ইবাদত মাতব্বর, মুক্তার হোসেন, মকিম মাতব্বর, মেরেজান বেগম ও লিলি বেগমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

আসামিদের অত্যাচার সইতে না পেরে তিন বছর আগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় ৮ পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে এসব পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পালিয়ে থাকছেন।

টুকু হত্যা মামলার বাদী শাজাহান মাতব্বর বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে আমার দুই ভাইকে হত্যা করে। মামলা করায় আমাদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে। মামলা তুলে না নেয়ায় একের পর এক হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমাদের ৮ পরিবারকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে আসামিরা। প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছাড়ার পর ৮ পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে ৮টি পরিবারকে এলাকাছাড়া করার ঘটনা নজিরবিহীন। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের মদদে এমন কাজ করছে আসামিরা।

এএম/এমএস