বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপকে ঘিরে উৎসবের রঙে মাতে সারা বিশ্ব। মাঠের খেলায় রঙ ছড়ান খেলোয়াড়রা, মাঠের বাইরে সেই রঙে রঙিন হয় সারা বিশ্ব। কিন্তু রঙ ছড়ানো এসব জাদুকরের পক্ষে তো আর সারাজীবন ধরে খেলে যাওয়া সম্ভব নয়, একটা সময় থেমে যেতে হয় তাদের।
Advertisement
রাশিয়ায় আসন্ন বিশ্বকাপেও থেমে যেতে হবে বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ফুটবলারকে। এখনো পর্যন্ত নিজেদের পায়ের জাদুতে বিমোহিত করেছেন সেসব কিংবদন্তি। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর ফুটবলের বিশ্ব আসরে দেখার সম্ভাবনা নেই। এবারের আয়োজনে দেখে নেয়া যাক আসন্ন বিশ্বকাপেই থেমে যাবেন যেসব কিংবদন্তি খেলোয়াড়েরা:
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (স্পেন)স্পেনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ধরা হয় আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ইনিয়েস্তার করা বিশ্বকাপজয়ী গোল তাকে অমরত্ব দিয়েছে স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে। এছাড়া বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ২টি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল এবং ১টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন ‘ডন’ খ্যাত এই ফুটবলার।
২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞে অভিষেক হয় ইনিয়েস্তার। এরপর ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে সবক’টি ম্যাচে খেলেছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে এরই মধ্যে ৩৪ ছুঁয়েছে ইনিয়েস্তার বয়স। ছেড়ে দিয়েছেন শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা। রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষেই হয়তো অবসর নিয়ে নেবেন জাতীয় দল থেকেও। তবে অবসর না নিলেও ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের পর্দা ওঠার আগেই যে বুটজোড়া তুলে নেবেন ইনিয়েস্তা তা নিয়ে কোন সংশয় নেই।
Advertisement
হাভিয়ের মাচেরানো (আর্জেন্টিনা) ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার রানারআপ হওয়ার পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন হাভিয়ের মাচেরানো। সেবারের সেমিফাইনাল ম্যাচে ডাচ খেলোয়াড় আরিয়েন রোবেনকে করা তার ট্যাকেল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ট্যাকেলের তালিকায়। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই মিডফিল্ডার।
তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে আমি মাচেরানোর মতো সাহসী এবং বুদ্ধিমান ডিফেন্ডার দ্বিতীয়টি দেখিনি।’ সাহসী ডিফেন্ডিংয়ে নিজ দলের রক্ষণ আগলে রাখতে জুড়ি নেই তার। কিন্তু এরই মধ্যে বয়সের কাটা ছুঁয়েছে ৩৩! তাই রাশিয়া বিশ্বকাপেই শেষ হতে যাচ্ছে আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের বিশ্বকাপ যাত্রা।
টিম কাহিল (অস্ট্রেলিয়া)বিশ্ব ফুটবলে খুব বড় শক্তি নয় অস্ট্রেলিয়া। তবে আপন মহিমায় ফুটবলের বিশ্ব সেরাদের কাতারে নিজের নাম তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড টিম কাহিল। অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল দলে তার প্রভাব এতোটাই যে বিশ্বকাপে কাহিলের গোলব্যতীত কোন ম্যাচ জেতেনি ‘সকারু’ খ্যাত দল অস্ট্রেলিয়া। ব্রাজিলে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে ৩টি বিশ্বকাপে খেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৮টি ম্যাচ খেলেছেন কাহিল। এই ৮ ম্যাচে তার পা ছুঁয়ে বল জাল জড়িয়েছে মোট ৫ বার। আসন্ন বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের ৪র্থ এবং শেষ বিশ্বকাপে নামার অপেক্ষায় আছেন তিনি। কেননা এরই মধ্যে বয়সটা যে ৩৮ পেরিয়েছে কাহিলের।
Advertisement
রাফায়েল মারকুইজ (মেক্সিকো) বয়সটা ৩৯ পেরোলেও মাঠের খেলায় এর ছাপ পড়তে দেননি মেক্সিকো ফুটবল দলের অধিনায়ক রাফায়েল মারকুইজ। রাশিয়া বিশ্বকাপে মাঠে নামার মাধ্যমে ২টি রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪টি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার ইতিহাস গড়বেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো মেক্সিকোকে বিশ্ব আসরে নেতৃত্ব দেন মারকুইজ। এরপর ২০১০ এবং ২০১৪ সালের আসরেও তার অধীনেই খেলেছে মেক্সিকো।
এছাড়া রাশিয়া বিশ্বকাপে মেক্সিকোকে নিয়ে মাঠে নামতে বিশ্বের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ ৫টি বিশ্বকাপ খেলার কৃতিত্ব অর্জন করবেন তিনি। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে ফুটবলের বিশ্ব আসরে পা রেখেছিলেন তিনি। এই দুই রেকর্ড গড়লেও এবারের আসরেই থেমে যেতে হবে মারকুইজকে। কেননা এরই মধ্যে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন ‘এল কায়সার’ খ্যাত এই ফুটবলার। বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্যই মূলত এখনো পাকাপোক্তভাবে বুটজোড়া তুলে রাখেননি তিনি।
এসএএস/আরআইপি