দেশজুড়ে

রোহিঙ্গা শিশুর কথায় হাসলেন প্রিয়াঙ্কা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুর হাত ধরে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখলেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে তিনি বাংলায় কথা বলেছেন, নিয়েছেন খোঁজখবর, মেতেছেন আড্ডায়, হেসেছেন রোহিঙ্গা শিশুদের কথায়।

Advertisement

প্রিয়াঙ্কার সফরসূচিতে অাগামীকাল মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার কথা থাকলেও সোমবার হোটেলে পৌঁছেই বিকেলে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান ইউনিসেফের এই শুভেচ্ছাদূত।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালি ব্রিজের পাশে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ডায়রিয়া হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি। পাশাপাশি ঘুরে দেখেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পও।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ইউনিসেফ ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ইউনিসেফ পরিচালিত হাসপাতালে গেলে ভেতরে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রিয়াঙ্কা সেখানে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।

Advertisement

হাসপাতাল থেকে বের হলে সামনে পড়া রোহিঙ্গা কিশোর রিফাত হোসেনকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বাংলায় জিজ্ঞেস করেন ‘তোমাদের এখানে আমাকে ঘোরাবে?’ মাথা নেড়ে রিফাত সম্মতি জানালে হেসে দেন দেন প্রিয়াঙ্কা। পরে তার হাত ধরেই রোহিঙ্গা শিবিরে হাঁটা শুরু করেন বলিউডের ফ্যাশনখ্যাত এ তারকা।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আসছেন, খবরটি আগে থেকেই রটে যায়। তাই অতিথিদের গাড়ি এসে থামতেই ভিড় করেন রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা মানুষজন। সঙ্গে আরও আসেন স্থানীয় অধিবাসীরা। যে তারকাকে সবাই দেখেছেন হিন্দি চলচ্চিত্রে, তাকে কাছ থেকে এক নজর দেখার জন্য সবার চেষ্টার কমতি ছিল না। মুহূর্তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগে থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে আর লাঠিপেটা করে সবাইকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে বাধা দেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। পুলিশকে অনুরোধ করেন, ‘প্লিজ, কাউকে এভাবে সরাবেন না। ধাক্কা দেবেন না।’

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ক্যাম্পের ভেতর আরেকটি শিশুর সঙ্গে কথা বলেন। বাংলায় ছেলেটিকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার নাম কী?’ ছেলেটি বলল, মো. রফিক। ‘তুমি স্কুলে যাও?’ ছেলেটি মাথা নেড়ে বলল, যাই। এ সময় আব্দুল আজিজ নামের আরেক শিশুর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের ফটোসেশনে অংশ নেয়ার পর ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত বাহারছড়া ত্যাগ করেন।

বিকেল সোয়া ৪টায় প্রিয়াঙ্কা গাড়িতে ওঠেন। যাওয়ার আগে হাত নাড়িয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নেন। বাংলায় বললেন, ‘আবার আসব।’

Advertisement

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সোমবার সকাল ৮টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এখানে ঘণ্টা তিনেক অবস্থান করার পর তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে প্রিয়াঙ্কাকে উখিয়ায় রয়েল টিউলিপ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কক্সবাজারে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া চার দিন থাকবেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরাজুল হক টুটুল জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে প্রিয়াঙ্কা সড়কপথে ইনানীতে পৌঁছেছেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকেলে তিনি মেরিন ড্রাইভ হয়ে হোটেলের কাছে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার সফরসূচিতে রয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তিনি উখিয়ার বালুখালী ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এরপর বিকেলে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন তিনি। বুধবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন এই বলিউড তারকা।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। ঢাকায় এসে ফেসবুক নিজের ভেরিফায়েড পেজে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ক্যাম্পে যাচ্ছি। আমার ইনস্টাগ্রামে সেখানকার সব অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আমাকে সেখানে অনুসরণ করতে থাকুন। এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের ভাবা উচিত। ভাবতে হবে আমাদেরও।’

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ১৯ মে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আমন্ত্রণে প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের রাজকীয় বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি দুবাই হয়ে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ঢাকায় এসেছেন। চারদিন পর ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/এএম/আরআইপি