ধর্ম

মুমিনের ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস রমজান

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষ এবং জিন শুধুমাত্র আমার ইবাদত ব্যতিত অন্য কোনো কাজে সৃষ্টি করিনি।’ তাই মুমিন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি উত্তম কাজই ইবাদত। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস বা বসন্তকাল হলো রমজান মাস।

Advertisement

আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা ফরজ করার কারণ উল্লেখ করে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

কুরআনের আয়াতে কারিমা থেকে বুঝা যায় যে, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নেকট্য অর্জনের মাস রমজান। মানুষের গোনাহ ও পাপ-পংকিলতাকে রোজা নামক আগুনে ভষ্ম করে দিয়ে পরিশুদ্ধ হওয়ার মাস রমজান। আর তাইতো মুমিনের শ্রেষ্ঠ মাস হলো রমজান।

আরও পড়ুন > ইফতারের সময় দোয়া কবুলে প্রিয়নবির ঘোষণা

Advertisement

শারীরিক ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে সাওম পালন করা অত্যন্ত কষ্টকর। এটা ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। রোজা অধিক কষ্টের ইবাদত হওয়ার কারণেই এ মাসে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে বসন্তের আবহ বিরাজ করে।

আল্লাহর বান্দারা পবিত্র রমজান মাস জুড়ে দিনের বেলা সাওম বা রোজা পালন করে আর রাতে তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও কুরআন তেলাওয়াতসহ নফল ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করে।

মুসলিম উম্মাহ যাতে নির্বিঘ্নে জান্নাতি আবহে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে এ মাসের ইবাদত পালন করতে পারে সে জন্য আল্লাহ তাআলা এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন আর শয়তানকে কুমন্ত্রণাদানে বিরত রাখতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। এটা রোজাদারের জন্য এক মহাপুরস্কার।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের ব্যাপারে কসম করে বলেছেন যে, রমজান মাস ইবাদত-বন্দেগির জন্য সর্বোত্তম মাস। হাদিসে এসেছে-

Advertisement

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি।

কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে।

এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ইবনে খুযাইমা, তাবারানি, বাইহাকি)

আও পড়ুন > তারাবিহ নামাজ কত রাকাআত পড়বেন?

যেহেতু হাদিসের আলোকে রমজান মুমিনের জন্য ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস আর মুনাফিকের জন্য শ্রেষ্ঠ ক্ষতির মাস। তাই মানুষের উচিত এ মাসে যাবতীয় নেফাক থেকে বিতর থেকে ইবাদত বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করা।

তাছাড়া আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ (রমজান) মাস পাবে; সে যেন রোজা পালন করে।’ হাদিসে কুদসিতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য রাখা হয়; আর আমি এর প্রতিদান দেব।’

পরিশেষে...যেহেতু কুরআন নাজিলের মাস রমজান হলো ইবাদত বন্দেগির জন্য সর্বোত্তম মাস। আর আল্লাহ তাআলা সাওম বা রোজাকে এতই পছন্দ করেন যে, তিনি যুগে যুগে সব নবি-রাসুলের ওপর রোজাকে ফরজ করে দিয়েছিলেন।

আর আল্লাহ এ মাসেই আসমানি সব হেদায়েত গ্রন্থ ও সহিফাসমূহ নাজিল করেছেন। তাই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন এবং হেদায়েত লাভে রমজান মাসের বিকল্প নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইবাদতের বসন্তকাল পবিত্র মাস রমজানে সাওম বা রোজা পালন, রাতের নামাজ তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ এবং কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম