লাগাতার বর্ষণে রাঙামাটিতে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকছে রাঙামাটি। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত জেলা সদরসহ কোথাও বিদ্যুৎ ছিল না। শুক্রবারও কয়েকবার হঠাৎ বিদ্যুৎ এলেও কিছুক্ষণ পর আবার চলে যায়। বিদ্যুতের এমন অবনতিতে চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা। এতে বিভিন্ন বিভাগে দাফতরিক কাজকর্মসহ স্বাভাবিক জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে কাপ্তাই ও চন্দ্রঘোনাসহ জেলা সদর ও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় খুঁটি ও গাছ হেলে এবং উপড়ে পড়া এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে সংযোগ লাইনের তার ছিঁড়ে এবং খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ত্রুটিগুলো সরাতে গিয়ে এবং বিচ্ছিন্নতার স্থান ও অবস্থান খুঁজে বের করে মেরামত কাজ করতে হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক তৎপর আছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলা পর্যন্ত এমন অবস্থা দূর হবে না। এদিকে, জেলার কাউখালী উপজেলা সদরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের ৩৩ হাজার কিলোভোল্টর খুঁটিগুলো হেলে পড়ে বিদ্যুতের চরম বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানান স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই খুঁটিগুলো হেলে পড়ে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাহক।সূত্র জানায়, উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সাবস্টেশনটি। বর্তমানে সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সম্প্রতি ওই ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার ছিঁড়ে গলে মাটিতে পড়ে দুই জনের প্রাণহানি হয়েছে। ফলে সেটিকে মরণফাঁদ হিসেবে দেখছেন এলাকার লোকজন। সর্বশেষ ২৫ জুলাই কাউখালী-রাণীরহাট সড়কে খামারবাড়ির ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত ওই সাবস্টেশনের কয়েকটি খুঁটি গাছের ওপর হেলে পড়ে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। ইতোমধ্যে তা মেরামত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ।এদিকে লাগাতার বর্ষণে শহর এলাকাসহ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বন্যা অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে ঢল নামায় এবং কাপ্তাই লেকের পানি বেড়ে যাওয়ায় সদরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে কাপ্তাই লেকের পানি কানায় কানায় পূর্ণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে লেকের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই লেক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অব্যাহত পাহাড় ধসে সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাঝে ব্যাপক ঝুঁকি ও আতঙ্ক কাজ করছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষে ব্যাপক মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বহু ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।জানা যায়, শহর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ছাড়াও রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাহাড় ধসে মাটি ধসে সড়কে পড়ছে। এতে প্রায় সময় সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। টানা বর্ষণে উজান থেকে পানি ও ঢল নামায় জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়াবাজার এবং ওই ইউনিয়নের এগাচ্যাছড়ি, গোয়াইনছড়ি নিচপাড়া, তারাছড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েকশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বাঘাইছড়ি ও বরকল উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানা গেছে।রাঙামাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউজ্জামান জানান, লাগাতার বর্ষণে শহর এলাকার কলেজগেট, রিজার্ভবাজার, পাবলিক হেলথ, তবলছড়িসহ রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য তৎপর প্রশাসন। যেসব স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এআরএ/পিআর
Advertisement