প্রতি চার বছর পর পর আয়োজিত হওয়া ফিফা বিশ্বকাপকে যদি বলা যায় কোনো ফুটবলারের স্বপ্ন পূরণের মঞ্চ, তাহলে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপকে সে স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি বললে ভুল হবে না। প্রতি দুই বছর পরপর আয়োজিত হওয়া যুবদলের এই বিশ্বকাপের গুরুত্বও কজন খেলোয়াড়ের জন্য কোনো অংশে কম নয়। তরুণ খেলোয়াড়েরা এখানেই প্রথম নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ পায়। সেই সাথে কোন বড় আসরের চাপ কেমন হতে পারে তাও তারা বুঝে যায় এ বিশ্বকাপ খেলেই।
Advertisement
স্পেনের ২০১০ সালের বিশ্বজয়ী দলের ১০ জন সদস্যই উঠে এসেছিলেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে। এছাড়াও ডিয়াগো ম্যারাডোনা, রোনালদিনহো গাউচো, থিয়েরি অঁরিদের মতো কিংবদন্তিরাও প্রথমে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপেই নজর কেড়েছিলেন। প্রতিবারের মতো এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপেও তেমন কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন যারা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে মাঠ মাতাতে যাচ্ছেন। এমন চারজনকে নিয়েই আজকের এ ফিচার...
গ্যাব্রিয়েল হেসুস : ব্রাজিল, ম্যানচেস্টার সিটিম্যানচেস্টার সিটির এ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বর্তমান ব্রাজিলের জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ ২০১৬ থেকেই। সেবার রিও অলিম্পিকে ৩ গোল করে ব্রাজিলকে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জেতাতে সাহায্য করেন তিনি। তারপর থেকেই দলে নিয়মিত। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১০ টি ম্যাচ খেলে ৬ টি গোল করেছেন এ ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড। তবে তার উত্থানের শুরু এই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপই।
প্রথম নজর কেড়েছিলেন পালমেইরাসে থাকাকালীন ২০১৫ সালে। তারপর সে বছরই ডাক পান নিউজিল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে। সে আসরে ১ গোল এবং ৩ অ্যাসিস্ট করে ব্রাজিলকে নিয়ে যান ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলেছিলেন হেসুস। এ ফরোয়ার্ডকে অলিম্পিকের পরই প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার সিটি কিনে নিতে ভুল করেনি। বর্তমানে সেখানেই আছেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিকে লিগ চ্যাম্পিয়ন বানানোতেও তার ভূমিকা ছিল মনে রাখার মতো।
Advertisement
আন্দ্রে সিলভা : পর্তুগাল, এসি মিলানপর্তুগাল নামটা শুনলেই সবার আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কথাই মাথায় আসবে। রিয়াল মাদ্রিদ এ ফরোয়ার্ড প্রায় এক যুগ ধরে একাই টেনে নিচ্ছেন ইউরোপের এই দলটিকে। সেই রোনালদোর উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়া হয়তো খুব বেশি সহজ হবে না, কিন্তু বর্তমান পর্তুগাল দলে কাউকে যদি রোনালদোর উত্তরসূরি বলতে হয়, তাহলে আন্দ্রে সিলভাই সেই উপাধির দাবি করতে পারেন।
বর্তমান এসি মিলান এই ফরোয়ার্ড পর্তুগালের হয়ে ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন ২০ টি ম্যাচ। করেছেন ১১ গোল। যার মাঝে আবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দশটি ম্যাচের নয়টিতেই গোল রয়েছে তার। এই আন্দ্রে সিলভার শুরুটাও অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকেই। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০বিশ্বকাপে প্রথম নজর কেড়েছিলেন এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। পুরো আসরে করেছিলেন চারটি গোল এবং দুইটি অ্যাসিস্ট। এরপরই জাতীয় দলে আসার রাস্তা পাকা হয়ে যায় তার জন্য। ২০১৬ সালের ইউরোর পর পর্তুগালের জার্সি গায়ে অভিষেক হয় সিলভার। বর্তমানে এ পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড আছেন ইতালিয়ান পরাশক্তি এসি মিলানে।
রদ্রিগো বেন্টানকুর : উরুগুয়ে, জুভেন্টাসজুভেন্টাস মিডফিল্ডার রদ্রিগো বেন্টানকুর নিজের জাত চিনিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায় হওয়া ২০১৭ সালের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে। সে আসরে সর্বমোট ছয় ম্যাচ খেলেছিলেন উরুগুইয়ান এই মিডফিল্ডার এবং দলকে পৌঁছে দিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। আসরটিতে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েছিলো উরুগুয়ে। পুরো আসরে তার নজরকাড়া পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়ে তাকে সে আসরের পরই বোকা জুনিয়র্স থেকে ইতালিয়ান পরাশক্তি জুভেন্টাসে নিয়ে আসেন দলটির কোচ ম্যাসিমিলানো অ্যালেগ্রি।
জুভেন্টাসের হয়ে বেঞ্চে বেশিরভাগ সময় কাটালেও যতোটুকু সময় পেয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে বেন্টানকুরের অভিষেক হয় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। সে থেকেই জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তিনি। তিনি এবার রাশিয়াতে যাচ্ছেন অমিত সম্ভাবনা আর স্বপ্ন নিয়ে।
Advertisement
এডসন আলভারেজ : মেক্সিকো, ক্লাব আমেরিকাক্লাব আমেরিকার এই ডিফেন্ডার উপরের তিনজনের চেয়ে একটু আলাদা। এডসন আলভারেজের জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের আগেই। বাকি তিনজনের চেয়ে এই দিক থেকে ব্যতিক্রম হলেও তিনিও তাদের মতো প্রথম চমক দেখিয়েছেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপেই।
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া যুবদলের এ বিশ্বকাপে এ মেক্সিকান ডিফেন্ডার দুর্দান্ত খেলেছিলেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি ক্লিন শিট রেখেছিলেন জার্মানি এবং সেনেগালের বিপক্ষে। তারপর থেকেই মেক্সিকো জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ এ ক্লাব আমেরিকা ডিফেন্ডার। আর বাকি তিনজনের মতো তিনিও রাশিয়ার টিকিট পেয়েছেন। রাশিয়ায় যাচ্ছেন ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে।
ডিকেটি/এমএমআর/জেআইএম