‘সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খুলনার মানুষের সমর্থন মিলেছে।’ আর যারা গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এমন সুষ্ঠু নির্বাচন দেশে কবে হয়েছে?’ -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে ‘ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুলনার ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্মে ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন।’
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নতুন মডেলের ‘চমৎকার’ খুলনা সিটির অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি, কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেনি হাজার হাজার ভোটার।
বিএনপির এ নেতা বলেন, যে নির্বাচনের পর লজ্জায় আজও নির্বাচন কমিশন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি। যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, মরা মানুষ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে সে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছসিত প্রশংসায় এটাই প্রমাণিত হলো যে, ভোট ডাকাতির হুকুম দাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা।
Advertisement
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে আগামী নির্বাচনও হবে খুলনা মডেলে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি নিজেই প্রমাণ করলেন তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা হবে বিরোধী দলগুলোর জন্য আত্মঘাতী। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনে আপনাদের পছন্দের লোকজনদেরকে ঢুকিয়ে সুষ্ঠু ভোট যাতে না হয় সে জন্য হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন। খুলনাতে ইসি সরকারে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। ইসি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বর্ণালী বাহিনী নন বরং এখন তারা ‘খাঁচায় পোষা তোতা পাখি’।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে না, এটা যে কতটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার তার আরও একটি উদাহরণ হলো গাজীপুর। সেখানে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল স্থানীয় এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপির সভাপতিত্বে এমপি-মন্ত্রীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রিজভী বলেন, ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, কর্নেল ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, ডা. দিপু মনি এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপিসহ আরও মন্ত্রী-এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্হি।
নয়াপল্টনে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও ছাত্রদল উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগেও অনেকবার তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তরুণ সমাজকে ভীত করার জন্যই রাজিব ও রাজের ওপর এ নির্যাতন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহ দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/আরএস/জেআইএম