গত বছরের তুলনায় এ বছর নড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে জেলার কৃষকরা সেই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। তবে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। এ দিকে নির্দিষ্ট সময়ে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় খোলা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকেরা। এতে তারা লোকসানে পড়ছেন। আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ করেছে বিগত বছরের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে।
Advertisement
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, নড়াইলে এ বছর ৩৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪১ হাজার ১৮৫হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায়ও ৫০০০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড রয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর। ১৫ দিন আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশের সঙ্গে নড়াইলের ২ মে থেকে ধান চাল সংগ্রহ করার কথা থাকলেও সেই সংগ্রহ আজও শুরু হয়নি। ফলে কৃষকেরা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ধান সংগ্রহ শুরু হলেও জেলার প্রান্তিক কৃষকেরা সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারে না। এ ছাড়া গুদামে সিন্ডিকেট করে ধান কেনা হয়।
Advertisement
উজিরপুর এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, এক মণ ধান উৎপাদন করতে ৭০০-৭৫০ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে বাজারে এক মণ ধান ৭০০-৮০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এতে তাদের খরচও ঠিকমত উঠছে না।
আমাদা গ্রামের কৃষক কাশেম ও বিজয়পুর গ্রামের কৃষক রতন কুমার জানান, তারা দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি কাজ করেন প্রতি বছর তারা অনেক ধান বিক্রি করেন। কিন্তু কোনো দিন তারা সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারেনি।
তাদের মত শত শত কৃষকের অভিযোগ গুদামে ধান দিতে গেলে বিভিন্ন বাহানা করে তাদের ধান নেয়া হয় না। যারা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ম্যানেজ করতে পারে তাদের ধানই সরকার সংগ্রহ করে।
কৃষকেরা আরও জানান, বর্তমানে বিল থেকে ধান কেটে গোলায় উঠানোর কাজ চলছে। একজন দিন মুজুরকে তিন বেলা খেতে দিয়ে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। সরকার যদি মৌসুমের শুরুতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
Advertisement
নড়াইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, ২ মে থেকে সারাদেশে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ বছর প্রতি মণ ধান ১০৪০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কেনা হবে। তবে জেলা থেকে কত মণ ধান সংগ্রহ করা হবে তার কোনো নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি।
নড়াইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মনোতোষ কুমার মজুমদার জানান, নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে দেয়া হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে। ধানের টাকা কৃষকদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় বলে জানান তিনি।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের নাম সংগ্রহ করে তালিকা করা হচ্ছে। প্রকৃত কৃষকেরাই এ তালিকাতে আছে। তবে জেলা থেকে আরও বেশি ধান সংগ্রহ করলে ভাল হয় বলে জানান তিনি। তার দাবি, জেলাতে যে পরিমান ধান উৎপাদন হয় সরকারিভাবে অনেক কম ধান সংগ্রহ করা হয়।
হাফিজুল নিলু/আরএ/জেআইএম