দেশজুড়ে

পাহাড়ে কলাগাছের বাকল থেকে তৈরি হচ্ছে সুতা

বছর জুড়ে পাহাড়ে কলার ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। এখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর অনেকটা কলা চাষের উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ের কলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সমতল জেলায়। কলা বিক্রির করে এখানকার অনেকেরই ভাগ্য বদলে গেছে। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কলার উৎপাদন বেড়েছে।

Advertisement

জানা যায়, কলা গাছের বিকল্প ব্যবহার না থাকায় কলার ছড়া কাটার পর কেটে ফেলা হতো কলা গাছও। কিন্তু বর্তমানে এ পাহাড়ে পরিত্যাক্ত কলার বাকল থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের সুতা। ইতোমধ্যেই ‘আনন্দ বিল্ডিং কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ অফ স্মল হোল্ডারস ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা খাগড়াছড়িতে এ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে। এতে অব্যবহৃত ও পরিত্যাক্ত কলার বাকল থেকে উন্নতমানের সুতা উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে উদ্যোক্তারা।

প্রকল্পের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আশুতোষ রায় জানিয়েছেন, আমাদের দেশে কলা গাছের বাকল কোনো কাজে আসে না। কলা সংগ্রহের পর স্থানীয় কৃষকরা কলা গাছটি পরিত্যাক্ত হিসেবে কেটে ফেলে। বর্তমানে পরিত্যাক্ত এ বাকল থেকে ফাইবার বা সুতা উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে। একটি কলা গাছের বাকল থেকে কমপক্ষে দুইশ গ্রাম সুতা উৎপাদন করা যায়।

তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে প্রতিটি পরিত্যাক্ত কলাগাছ ১৫ টাকা দরে কেনা হয়। তবে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় দূর থেকে কলা গাছ কিনতে গেলে খরচও বাড়ে। পাঁচটি কলা গাছের বাকল থেকে অন্তত এক কেজি সুতা পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩০ টাকা। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়া এলাকায় চলছে কলার বাকল থেকে সুতা উৎপাদন।

Advertisement

জার্মান দাতা সংস্থা ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফের অর্থায়নে আনন্দ বিল্ডিং কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ অফ স্মল হোল্ডারস ইন বাংলাদেশ কলা গাছের বাকল থেকে সুতার তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ওয়েস্ট অ্যাগ্রোর কারিগরি সহায়তা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আনন্দ এ কার্যক্রম শুরু করে। প্রকল্পের শুরুতে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের কারণে বাকল থেকে সুতা উৎপাদনে ধীরগতি ছিল। তবে বর্তমানে খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের নতুন সাব স্টেশন চালু হওয়ায় বিদ্যুৎ সমস্যা কেটে গেছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, কলা গাছের বাকল থেকে ফাইবার বা সুতা উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক। কলার বাকল থেকে ফাইবার অংশ সংরক্ষণের পর অবশিষ্ট অংশ থেকে বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়। কৃষক পর্যায়ে বার্মি কম্পোস্টের চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি কম্পোস্ট সার ২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

শ্রমিকরা জানান, কমিশন ভিত্তিতে মজুরি পেয়ে থাকে তারা। প্রতি কেজি ফাইবাব বা সুতা উৎপাদনে একজন শ্রমিক ১৩ টাকা পান। একজন শ্রমিক দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ কেজি পর্যন্ত সুতা উৎপাদন করতে পারেন। শ্রমিকদের মতে লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক সময় উৎপাদন কমে সারা দিনে তিনশ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আনন্দর নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় কলা গাছ সহজলভ্য। ফলে এটি সুতা উৎপাদনের বড় সম্ভাবনাময় এলাকা। তার মতে কলা গাছের বাকল থেকে তৈরি সুতা টেকসই ও মানসম্পন্ন। তিনি বলেন, জুট বা কটনের সঙ্গে মিশ্রণে এটি আরও টেকসই হয়। কলার বাকল থেকে প্রাপ্ত সুতা জুট বা কটনের সঙ্গে মিশ্রণে পেপার, হ্যান্ডি ক্রাফট, হ্যান্ড ব্যাগসহ নানা পণ্য তৈরি করা যায় বলেও জানান তিনি।

Advertisement

বর্তমানে প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে খাগড়াছড়িতে চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সফলতা পেলে এ প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করা যাবে।’

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএ/পিআর